চাঁদের অবস্থান দূরত্ব এবং নতুন তথ্য সংগ্রহ

ভূমিকা, চাঁদ ও আলো আঁধারী

ভূমিকাভূমিকা: চাঁদ কে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা এও শুনতে সোনা যায় চাঁদের বুড়ি নাকি সুতা কাটে। চাঁদ (Moon) পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবীর মতো চাঁদও সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। আসুন জেনে নেই চাঁদের আসল রহস্য উৎপত্তি অবস্থান ইত্যাদি বিষয়।

চাঁদচাঁদ (Moon) পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবীকে কেন্দ্ৰ করে চাঁদ অনবরত নিজের কক্ষপথে ঘুরে চলেছে। পৃথিবীর মতো চাঁদও সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। এর পরিবেশ প্রাণহীন ও ধুলাবালিময়। চাঁদ মাটি, শিলা, ধুলাবালিতে পূর্ণ গোলাকার এক উপগ্রহ, যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ। এর কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, নেই কোনো পানি কিংবা জীবন। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন।

আলো-আঁধারিটেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদের দিকে তাকালে দেখা যায়, চাঁদের কিছু অংশ উজ্জ্বল আবার কিছু অংশ অনুজ্জ্বল। অনুজ্জ্বল বা অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলগুলো কোটি কোটি বছর আগের সৃষ্টি। সে সময় গলিত শিলা ঠান্ডা হয়ে নিচু অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যা অনুজ্জ্বল এলাকা হিসেবে দেখা যায় । ল্যাটিন ভাষায় এই অঞ্চলগুলোকে বলা হয় মারিয়া বা সাগর। নাম সাগর হলেও এখানে কোনো পানি নেই, আছে শুধুই শিলা আর রুক্ষ মাটি। চাঁদের প্রথম নভোযাত্রীরা চাঁদের বুকে Sea of Tranquility তে নেমেছিলেন। চাঁদপৃষ্ঠের উঁচু অংশগুলো চাঁদের পাহাড় নামে পরিচিত।

👌 ১৬০৯ সালে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপে চাঁদের কিছু ছবি 👌

 👌 বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চাঁদ একটু একটু করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সরে যাওয়ার পরিমাণটি খুবই সামান্য- বছরে মাত্র ৪ সেন্টিমিটার। আজ থেকে ৫০ বিলিয়ন বছর পর চাঁদের এই সরে যাওয়া বন্ধ হবে। কিন্তু তখন চাঁদকে আর আজকের দিনের মতো বড় দেখাবে না এবং চাঁদের বার্ষিক গতিও তখন বেড়ে যাবে  👌

চাঁদের ভূপৃষ্ঠে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ

জ্বালামুখচাঁদের ভূপৃষ্টে অনেক আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বের বিভিন্ন শিলাখন্ড বা উল্কার আঘাতে এই হাজার হাজার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের (Crater) সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়েছিল চাঁদ উপগ্রহটি তৈরির সময়। পরবর্তীকালে ছোট ছোট গ্রহাণু বা এস্টেরয়েড (Asteroid)-এর আঘাতে সৃষ্টি হয়েছিল আরও কিছু আগ্নেয়গিরি। চাঁদের আগ্নেয়গিরিগুলোর বয়স পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি থেকে অনেক বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তবে এসব আগ্নেয়গিরির সবগুলেই মৃত। চাঁদে ছোট-বড় অনেক আকারের আগ্নেয়গিরি রয়েছে। চাঁদের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি ক্ষেত্রটি হলো মারিউস পাহাড় (Marius Hills)।

 👌 চাঁদের পাহাড় ও 'সাগর' চাঁদের তাপমাত্রা - ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করে। এ কারণে চাঁদে মানুষের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব নয়  👌

চাঁদের উৎপত্তি এবং চাঁদের Near Side and Far Side

দূরে-কাছেচাঁদ থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আকর্ষণ বল কম হলেও চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব কম হওয়ায় পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার মূল কারণ চাঁদের মহাকর্ষ বল। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে চাঁদের সময় লাগে ২৭.৩ দিন, ঠিক একই সময়ে চাঁদ তার নিজ অক্ষ রেখার সাপেক্ষে একবার ঘোরে। অর্থাৎ চাঁদের আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি একই। ফলে পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সব সময় চাঁদের একটি পাশই দেখা যায়। এই পাশটিকে বলা হয় কাছের দিক (Near Side)। তাই চাঁদের দূরের দিকের (Far Side) ছবি সংগ্রহ করার জন্য মহাকাশযানের সাহায্য নিতে হয়।

উৎপত্তিচাঁদের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল সেটা নিয়ে জ্যোতির্বিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যাটি হলো, মহাকাশ থেকে একটি বিশাল গ্রহাণু বা এস্টেরয়েড একসময় পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল। এর ফলে এস্টেরয়েড এবং পৃথিবী থেকে কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাশে চলে যায়। এরই কিছু অংশ পরে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে। আরও পরে মহাকর্ষ বলের কারণে এ শিলা অংশগুলো জমাট বেঁধে চাঁদের উৎপত্তি হয়। চাঁদের জন্মের এই তত্ত্বটি দানব আঘাত তত্ত্ব (Giant Impact Theory) নামে পরিচিত।

চাঁদের যে অংশে সূর্যের আলো পড়ে সে অংশে উজ্জ্বলতা থাকে। তখন ওই অংশে হয় দিন, অনেকটাই পৃথিবীর মতো। বাকি অংশে থাকে অন্ধকার রাত্রি । রাতের আকাশে আমরা সূর্যের আলো পড়া উজ্জ্বল। অংশটি দেখতে পাই। প্রতি রাতে আমরা চাঁদের ভিন্ন আকৃতি দেখি। এক রাতের পাতলা চাঁদের ফলা কয়েক রাত পর পূর্ণ চাঁদে পরিণত হয় । এভাবে ১৪ দিন পরপর অমাবস্যা ও পূর্ণিমা হয়। এ ব্যাপারটাকে বলা হয় চাঁদের দশা (Phase)।

বিজ্ঞানীদের চাঁদে অভিযান এবং গবেষণা

অভিযানচাঁদে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র 'নাসা'র অ্যাপোলো ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ এই ছয়টি। মহাকাশ যান চাঁদের মাটিতে নেমেছে। প্রতিবারই নভোযানগুলো। চাঁদের বিভিন্ন শিলা, পাথর, মাটি ইত্যাদি নিয়ে এসেছে পরীক্ষার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠ পরীক্ষার জন্য নাসা ১৯৯৪ সালে ‘ক্লেমেনটাইন' (Clementine) অভিযান পরিচালনা করে। এর মাধ্যমেই বিজ্ঞানীরা প্রথম চাঁদে পানি থাকার সম্ভাবনা আবিষ্কার করেন। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০০৩ সালে স্মার্ট-১ (Small Missions for Advanced Research and Technology, SMART-1) নামের চন্দ্রাভিযান পরিচালনা করে। এটি ছিল প্রথম সৌরশক্তিচালিত মহাকাশ অভিযান। চাঁদের বিভিন্ন উপাদানের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষার জন্য এটিকে পাঠানো হয়। ২০০৬ সালে এটি চাঁদের বুকে ধ্বংস হয়ে যায় । বর্তমানে ভারত, চীন ও জাপান চাঁদে মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করছে।

 👌 এপোলো-১৫ মিশনে চন্দ্রযানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অভিযাত্রী জেমস আরউইন (James Irwin) এই চন্দ্রযান (Lurar Rover)টি পরবর্তী কয়েকটি চন্দ্র মিশনেও ব্যবহার করা হয়  👌

 👌 চাঁদের বুকে পা রাখা প্রথম মানুষটির নাম। নিল আমস্ট্রং (Neil Armstrong, 1930 ) । অ্যাপোলো-১১ নভোযানের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই তিনি এই সাফল্য অর্জন করেন। বিখ্যাত সেই অভিযানে আমস্ট্রং-এর সাথে আরও ছিলেন এডউইন অলড্রিন (Edwin Eugene Aldrin 1930 ) এবং মাইকেল কলিন্স (Michael Collins, 1930)। অ্যাপোলো ১১ মোট ৮ দিন ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট মহাকাশে অবস্থান করে এবং চাঁদকে মোট ৩০ বার প্রদক্ষিণ করে  👌

  চাঁদ নিয়ে কিছু তথ্য:

👌 ব্যাস : ৩৪৮০ কিলোমিটার
পৃথিবী থেকে দূরত্ব: ৩৮৪, ৪০০ কিলোমিটার 
ভর: পৃথিবীর ভরের ০.০১২ ভাগ 
আহ্নিক গতি: ২৭.৩৩ দিন
বার্ষিক গতি : ২৭.৩৩ দিন
দুটি নতুন চাঁদের মধ্যবর্তী সময়: ২৯.৫৩ দিন  👌

চাঁদ নিয়ে গবেষণাচাঁদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রাচীনকাল থেকেই। পূর্ণিমার চাঁদের আলো মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। প্রাচীন ভারত ও ইরাকের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতেন। চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী শি শেন (Shi Shen) সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পেরেছিলেন। আর্যভট্ট প্রথম বলেছিলেন যে, চাঁদ সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। মধ্যযুগে চাঁদের আকার, আকৃতি, পরিভ্রমণকাল, পৃষ্ঠ ইত্যাদি বিষয়ে প্রচুর গবেষণা হয়। ১৬০৯ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের সাহায্যে পরিষ্কারভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করেন।

সর্বশেষ কথা

শেষ কথাচাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। তবুও চাঁদ এত সুন্দর। যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা চাঁদ নিয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে। বর্তমানেও চাঁদকে কেন্দ্র করে অনেক গবেষণা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে চাঁদ হয়তো আর চাঁদ থাকবে না থাকবে মানুষের হাতের মুঠোয়। আর এটি হচ্ছে বিজ্ঞানের বিজয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭