ইন্টারনেট বর্তমান পৃথিবী বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ যোগাযোগ মাধ্যম

ইন্টারনেট

ইন্টারনেট (Internet) বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ যোগাযোগ মাধ্যম । তথ্য আদান প্রদানের জন্য এরচেয়ে দ্রুতগতির ও নির্ভরযোগ্য উপায় আর নেই । ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা এতই বেশি যে, এর ব্যবহার এখন শহর ছেড়ে গ্রামেও বিস্তৃত হচ্ছে । বিজ্ঞানের আর কোনো আবিষ্কার মানুষের জীবনকে এত দ্রুত এতটা বদলে দেয়নি । এই ইন্টারনেটের কারণেই প্রযুক্তির নতুন একটি ধারা মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে, যার নাম তথ্যপ্রযুক্তি ।

ইন্টারনেট কী?

অসংখ্য কম্পিউটারের বিশাল নেটওয়ার্কই হলো ইন্টারনেট । এই নেটওয়ার্ক পৃথিবীর এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত । প্রথমে ইন্টারনেট বলতে কয়েকটি কম্পিউটারের মধ্যে ছোট নেটওয়ার্ককে বোঝাত । জরুরি অবস্থায় দ্রুত যোগাযোগের জন্য ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিজ্ঞানীরা এ ধরনের ছোট নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন । পরবর্তীকালে এই নেটওয়ার্কের আকার বাড়তে থাকে এবং এটিকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করা হয় । বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকে । ব্যক্তি ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (Internet service Provider বা ISP) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন ।


মাধ্যম

ইন্টারনেটের মাধ্যমে শত শত কম্পিউটার পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে । ইন্টারনেটে তথ্য আদান-প্রদান আলো, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে । এখন ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আইএসপি (ISP) ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে ।


অনেক প্রতিষ্ঠান আবার দূরবর্তী স্থানে রেডিও স্টেশন বসিয়ে তার বিহীন ইন্টারনেট সংযোগ দেয় । মূলত এভাবেই সারা পৃথিবী জুড়ে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে । আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে মূল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকে । এই ফাইবারের ভেতর দিয়ে আলো হিসেবে তথ্যের আদান-প্রদান হয় ।


ওয়েব পেইজ

যেকোনো তথ্য ধারণ করার জন্য ধারক (যেমন, কাগজ, বই, পত্রিকা, চার্ট ইত্যাদি) প্রয়োজন । ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতে যে ধারকে তথ্য জমা থাকে, তাকে বলা হয় 'ওয়েব পেইজ' (Web Page) । ইন্টারনেটে কোটি কোটি ওয়েব পেইজ রয়েছে । প্রোগ্রাম লিখে এই ওয়েব পেইজ তৈরি করা হয় ।


ওয়েব পেইজে তথ্য খোঁজার জন্য আছে 'সার্চ ইঞ্জিন' (Search Engine)। এর সাহায্যে যেকোনো বিষয়ে তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব । যেমন, সার্চ ইঞ্জিনে 'ডাইনোসর' (Dinosaur) লিখে Enter' বোতাম চাপলে ডাইনোসর-সংক্রান্ত তথ্য যেসব ওয়েব পেইজে আছে, সেগুলোর ঠিকানাসহ তালিকা চলে আসে । গুগল (Google) এবং ইয়াহু (Yahoo) বিখ্যাত দুটি সার্চ ইঞ্জিন ।


ওয়েব ব্রাউজার

কম্পিউটারে যেকোনো কাজ করতে হলে নির্দিষ্ট কোনো সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে হয় । যেমন, লেখালেখি, ছবি সম্পাদনা অথবা গান শোনা ইত্যাদির জন্য ভিন্ন ভিন্ন। সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় । আবার কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের প্রয়োজন পড়ে, যা ‘ওয়েব ব্রাউজার' (Web Browser) নামে পরিচিত । প্রথম জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজারটির নাম ছিল ‘মোজাইক’ (Mosaic) । এটি ১৯৯৩ সালে তৈরি হয়।

বর্তমানে ‘মজিলা ফায়ারফক্স' (Mozilla Firefox), 'ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার' (Intrenet Explorar), ‘সাফারি’ (Safari) জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার । ব্যবহারকারীদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় রেখে ওয়েব ব্রাউজারগুলোর নিয়মিত নতুন সংস্করণ বের হচ্ছে।


ওয়েবসাইট

এক বা একাধিক ওয়েব পেইজের সমন্বয়ে ওয়েবসাইট (Website) তৈরি হয় । ইন্টারনেটে প্রতিটি ওয়েব পেইজই কোনো না কোনো ওয়েবসাইটের অন্তর্ভুক্ত । ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাই আসলে ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন । ইন্টারনেট ভিত্তিক সব কাজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হয়ে থাকে । যেমন, গুগলের মাধ্যমে কোনো কিছু খোঁজার জন্য প্রথমে গুগলের ওয়েবসাইটে ঢুকতে হয় (www.google.com) ।

বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে । এগুলোর মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় । বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে । যেমন- জ্ঞানভিত্তিক, (www.wikipedia.com, www.howstuffworks.com), বাণিজ্যিক (www.amazon.com) সামাজিক (www.facebook.com, www.twitter.com) ইত্যাদি ।


ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব

বিজ্ঞানীদের কাজ সহজতর করতেই আবিষ্কার হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (World Wide Web বা www) । বিজ্ঞানীরা অনেক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং দ্রুততম সময়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তাদের জন্য খুব জরুরি ।

১৯৮৯ সালে টিম বার্নারস লি (Tim Berners Lee) ও তাঁর সহযোগীরা গবেষণা করার সময় হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (Hyper- text Transfer Protocol বা http) আবিষ্কার করেন । ফলে ইন্টারনেট সার্ভারে রাখা একটি ওয়েব পেইজ বহু কম্পিউটারে দেখা সম্ভব হয়েছিল । ১৯৯২ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সাধারন মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় । এর ফলে ২০০০ সাল নাগাদ ১০০ কোটিরও বেশি পরিমাণ ওয়েব পেইজ তৈরি হয় ।

চ্যাটিং (Chatting) ইন্টারনেটের খুব মজার ও কাজের একটি বিষয়। চ্যাটিং-এর মাধ্যমে কারও সাথে সরাসরি কথা বলা বা তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।

জীবন বৈচিত্র্যে ইন্টারনেট

ইন্টারনেট মানুষের জীবনধারাকে পাল্টে দিচ্ছে । বর্তমানে অনেক পরীক্ষার ফলাফলই ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয় । ফেসবুক বা টুইটারের মতো সামাজিক ওয়েব সাইটগুলোর মাধ্যমে বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ আজ ক্লাসরুম, খেলার মাঠ পেরিয়ে আরও বড় ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে । বহু দেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য কেনা-বেচা এখন খুব জনপ্রিয় ।

ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য অর্ডার দিয়ে সেটা বাসায় বসেই পাওয়া সম্ভব । বাংলাদেশে এখন অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের সাহায্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সেবা প্রদান করা হয় । পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে

শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে জীবন হয়ে উঠছে। দ্রুততর ও সহজ । ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট অবদান রাখছে ।

ইমেইল

চিঠির ইলেকট্রনিক সংস্করণ হলো ই-মেইল (e-mail বা Electronic Mail) । ই-মেইল হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত আদান-প্রদান করা যায়, এমন চিঠি বা বার্তা । ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায় বা তথ্য পাঠানো যায় ।

পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে লিখিত তথ্য, গান, ভিডিও, ইত্যাদি সংযুক্ত (Attach) করে পাঠানো যায় । ই-মেইলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নিমেষের মধ্যে যে কাউকে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে তথ্য পাঠানো সম্ভব ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭