কি আশ্চর্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ

উদ্ভিদ

উদ্ভিদ (Plants) ছাড়া পৃথিবীর স্বাভাবিক অবস্থা কল্পনা করা যায় না । প্রাণিজগৎ উদ্ভিদের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল । আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন থেকে শুরু করে অধিকাংশ জিনিসের প্রয়োজন মেটায় উদ্ভিদ । 


খাদ্য সংগ্রহ, আসবাবপত্র ও ঘরবাড়ি তৈরি, ওষুধ তৈরি প্রভৃতির জন্য মানুষ সরাসরি উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল । অন্য প্রাণীরাও উদ্ভিদ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে । তবে পৃথিবীতে যে পরিমাণ উদ্ভিদ রয়েছে, তার মধ্যে খুব অল্পসংখ্যকই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী ব্যবহার করে । বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে গাছ, লতা, গুল্ম ইত্যাদি । এসব উদ্ভিদের ফুল, ফল, লতা, কাণ্ড আমরা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি । অবশ্য সব উদ্ভিদ আমাদের জন্য উপকারী নয়, কিছু কিছু উদ্ভিদ রীতিমতো ক্ষতিকর । উদ্ভিদ  জল ও স্থল উভয় স্থানেই জন্মায়।


পেজ সুচিঃ

গঠন ফল ফুল

গঠন : কাণ্ড, পাতা, শিকড়, ফুল ও ফল এসব অংশ নিয়ে সাধারণত উদ্ভিদ বেঁচে থাকে ।

ফল : গাছের ফলে থাকে বীজ এবং বীজ থেকে জন্ম নেয় নতুন গাছ ।

ফুল : ফুল প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি এটি উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।


নানা ধরনের উদ্ভিদ

উদ্ভিদের ফুল ও ফল দুই-ই হয়, তবে কোনো কোনো উদ্ভিদের ফল হলেও ফুল সহজে নজরে পড়ে না। আবার এমনও উদ্ভিদ আছে, যেগুলো একবার ফল দিয়েই মারা যায় । এর বাইরে লতা ও ঝোপজাতীয় অসংখ্য উদ্ভিদ রয়েছে । পেনিসিলিয়াম নামক এক প্রকার ছত্রাক থেকে বিজ্ঞানীরা পেনিসিলিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আবিষ্কার করেন।

উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ

কাণ্ড শিকড় পাতা

কাণ্ড : শিকড় ও পাতার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে কাণ্ড । এ ছাড়া কাণ্ডের কাজ হলো পাতায় যাতে পর্যাপ্ত রোদ লাগে, সেভাবে পাতা এবং ফুল-ফলকে মেলে ধরা ।

শিকড় : শিকড় মাটি থেকে গাছের জন্য খাদ্যরস সংগ্রহ করে।

পাতা : পাতায় গাছের খাদ্য তৈরি হয়।

👌বহু বছর বেঁচে থাকে, এমন সব উদ্ভিদের গায়ে অর্কিড জন্মায়। সাধারণত যেসব গাছের বাকলে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি (যেমন: বট, অশ্বত্থ, মেঘ শিরিষ ইত্যাদি) সেগুলোর গায়ে অর্কিড জন্মায়। এরা অন্য গাছের উপর আশ্রয় করে জীবন শুরু করে, কিন্তু খাদ্য তৈরি করে নিজেরা। অর্কিড এক ধরনের পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ, যাতে খুব সুন্দর ফুল হয়।👌


জন্ম ও বিকাশ এবং দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ

পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর দিকে উদ্ভিদ ছিল না। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে ঠাণ্ডা হওয়ার পর পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় পানি। এ জলাভূমিতেই একসময় জন্ম নেয় উদ্ভিদ । মনে করা হয়, একটিমাত্র কোষ নিয়েই তাদের জীবন শুরু হয়েছিল । এ জাতীয় উদ্ভিদ থেকে ক্রমে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এবং আরও পরে আমরা যে সমস্ত উদ্ভিদ এখন দেখি, সেগুলোর জন্ম হয় । 

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর প্রথম উদ্ভিদ ছিল শ্যাওলা প্রকৃতির । এসব উদ্ভিদে ফুল ও ফল কিছুই হতো না । আজ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দেখা গিয়েছিল সাইক্যাড (Cycad) প্রজাতির উদ্ভিদ । 

অনেক ধরনের সাইক্যাড আমরা এখনো দেখতে পাই । তাই এদের বলা হয় জীবন্ত জীবাশ্ম। (Living fossil) । হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বড় আকৃতির গাছ যেমন ছিল, তেমনি ছিল ছোট আকৃতিরও । এসব গাছের অধিকাংশই এখন আর নেই । যে কয়েকটি বংশ টিকে আছে তার মধ্যে ইকুইজেটাম, সেলাজিনেলা, লাইকোপোডিয়াম, ফার্ন ও পাইনজাতীয় গাছ প্রধান । 

আমরা যে ফার্নগাছ দেখতে পাই, তা ছোট আকৃতির উদ্ভিদ । আদিম যুগের ফার্নগাছগুলো ছিল তালগাছের মতো বড় । সে যুগের একজাতীয় ফার্নগাছ আমাদের কাছে ঢেঁকিশাক নামে পরিচিত।


দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ

আমেরিকার রেডউড গাছকে পৃথিবীর দীর্ঘজীবী গাছ বলা হয় । বিজ্ঞানীদের মতে, দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বছর পুরোনো রেডউড গাছ রয়েছে । এ গাছগুলো শুধু দীর্ঘজীবী নয়, আকারেও বড় । এ ধরনের দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ আফ্রিকার বনেও পাওয়া যায় । দীর্ঘজীবী অন্যান্য গাছের মধ্যে রয়েছে ওক, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি । আমাদের দেশে বট,অশ্বত্থ, তুঁত এসব গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে ।

পোকাখেকো উদ্ভিদ পাতার সাহায্যে খাদ্য তৈরি করে

কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে, যেগুলো নিজেদের তৈরি খাদ্যের বাইরে পুষ্টি উপাদানের জন্য পোকা-মাকড় খেয়ে থাকে । এ জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে একটি হলো ভেনাস ফাইট্র্যাপ । এ গাছের পাতা দু'টি অংশে বিভক্ত । এগুলো এমনভাবে ছড়ানো থাকে যে, ছোট কোনো প্রাণী পাতায় বসার সাথে সাথে পাতার দুই অংশ একত্রিত হয়ে যায় । ফলে প্রাণীটি পাতার মধ্যে আটকা পড়ে গাছটির খাদ্যে পরিণত হয় ।

পাতার সাহায্যে খাদ্য তৈরি 👌

গাছ পাতার সাহায্যে নিজের খাদ্য তৈরি করে । গাছের পাতা দিনের বেলায় সূর্যের আলোর সাহয্যে পাতার ক্লোরোফিল, মাটি থেকে সংগৃহীত পানি ও লবণ এবং বাতাস থেকে সংগৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইড-এর মাধ্যমে রাসায়নিক ক্রিয়ায় শর্করা তৈরি করে। পাশাপাশি গাছ স্টোমাটার মাধ্যমে অক্সিজেন ত্যাগ করে । সারা দিন এভাবে গাছ খাদ্য তৈরি করে পাতায় জমায় এবং সারা রাত তা শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয় । গাছের পাতায় খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় বলে পাতাকে গাছের ‘রান্নাঘর' বলা হয় । আর খাদ্য তৈরির পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis)।



মৃতজীবী উদ্ভিদ

কিছু কিছু উদ্ভিদ পচা-গলা উদ্ভিদ বা প্রাণীর ওপর নির্ভর করে বাঁচে । এদের মৃতজীবী উদ্ভিদ বলা হয়। অর্কিড রাস্না ও মনোট্রপা এ জাতীয় উদ্ভিদ । তবে এরা পচা- গলা জিনিস থেকে জৈবিক খাদ্য গ্রহণ করে না । এক প্রকার ছত্রাক তাদের শিকড়ে অবস্থান করে খাদ্য গ্রহণ করার কাজে তাদের সাহায্য করে।

👍স্বর্ণলতা একধরনের পরজীবী উদ্ভিদ।
এগুলো অন্য গাছের উপর জন্মায় এবং ওই গাছ থেকেই
খাদ্য সংগ্রহ করে। তাদের
এক রকম শিকড় আছে,
যাকে বলা হয় শোষকমূল।
এই শোষকমূল দিয়েই
তারা অন্য গাছ থেকে
খাদ্য গ্রহণ করে।👍

মূল কথা

উদ্ভিদ পৃথিবীর জীববৃক্ষরূপ, যা জীবনচক্রে  বৃদ্ধি, এবং প্রজননের জন্য । উদ্ভিদের প্রধান উপাদান সুর্যের আলো, জল, ও কার্বন ডাইঅক্সাইড। এগুলি প্রকৃতির অত্যন্ত মূল্যবান উপাদান, যা উদ্ভিদকে ফোটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে। জীববৃক্ষগুলি বৃষ্টি, বাতাস, ও মাটি থেকে আহার নিয়ে থাকে, যাতে তারা জীবনচক্র চালাতে পারে। উদ্ভিদ এর বৃদ্ধি, পরিস্থিতি সংরক্ষণ, এবং অক্সিজেন প্রস্তুত করতে তাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরণের ফাংগাস, বাক্টেরিয়া, এবং অন্যান্য জীবাণুরা ওই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, উদ্ভিদ পৃথিবীর প্রাণী জীবনের মূল্যবান অংশ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭