বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা এবং হিংস্রতা কুকুরের বড় পরিচয়
কুকুর পরিবার
বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা এবং হিংস্রতা কুকুর পরিবারের (Canidae Dog Family) বড় পরিচয় । কুকুর ছাড়াও এ পরিবারে আছে শিয়াল ও নেকড়ে, কয়োট, বনকুকুর এবং র্যাকুন।
👇
👆
এদের সবার আকৃতি কুকুরের মতো হওয়ায় সম্মিলিতভাবে এদের কুকুর পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর অন্য সব মহাদেশে এদের পাওয়া যায় । প্রায় পাঁচ কোটি বছর ধরে এরা পৃথিবীতে টিকে আছে । হিংস্র হলেও কুকুর পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন খুব দৃঢ় ।
শিয়াল
লাল শিয়াল
লাল শিয়ালের খুব ভালো ঘ্রাণ, শ্রবণ এবং দৃষ্টিশক্তি রয়েছে । এর ফলে মানুষের বসতির খুব কাছেই সে লুকিয়ে থাকতে পারে । খেতের ইঁদুর (Field rat) এদের প্রিয় খাবার। এ কারণে রাতে কৃষিজমিতে প্রচুর শিয়ালের ডাক শোনা যায় ।
অন্যান্য শিয়াল
লাল শিয়াল ছাড়াও রয়েছে ধূসর শিয়াল, দ্রুতগামী শিয়াল এবং মেরু শিয়াল । ধূসর শিয়ালকে আমেরিকা অঞ্চলের বন-জঙ্গলে বেশি পাওয়া যায় । কুকুর পরিবারের মধ্যে এরাই একমাত্র গাছে চড়তে পারে । নাম শুনেই বোঝা যায়, দ্রুতগামী শিয়াল খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে । এরাও আমেরিকা অঞ্চলের বাসিন্দা । এরা লাল শিয়ালের চেয়ে আকারে ছোট ।
মেরু অঞ্চলের অন্যান্য প্রাণীর মতো মেরু শিয়ালের পশমও সাদা । তবে গ্রীষ্মে এদের পশমের রং বাদামি হয়ে যায় । ঘন ও মোটা পশম থাকায় এবং কান ছোট ও অনেক বেশি লোমশ হওয়ায় এদের দেহ তাপ ধরে রাখতে পারে ।
ফলে এদের শীতনিদ্রায় যেতে হয় না । বরং এসময় শীতনিদ্রায় থাকা অন্যান্য মেরু প্রাণীদের এরা শিকার করে । মরুভূমির শিয়ালদের কান অনেক বড় হয় । বড় কান দিয়ে তারা তাপ ছেড়ে দেয়, যা মরুভূমির গরমে তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করে।
শাবকের যত্ন
নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য
নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য হলো নেকড়ে (Wolf) । দক্ষ শিকার, বুদ্ধিমত্তা এবং দৃঢ় সামাজিক বন্ধনের জন্য এরা খুব পরিচিত । এদের প্রধানত দুটি ভাগ আছে- ধূসর নেকড়ে ও লাল নেকড়ে । ধূসর নেকড়ে উত্তর গোলার্ধে বাস করে । এদের মধ্যে যেগুলো মেরু অঞ্চলে বাস করে, সেগুলো ধূসর মেরু হায়েনা নামে পরিচিত। বাকিরা জঙ্গলে থাকে । অন্যদিকে লাল নেকড়ে বাস করে আমেরিকায় ।
নেকড়ের চোয়াল ও পা খুব শক্ত । এরা শিয়াল থেকে কিছুটা বড় হয় । ফলে এদের ওজনও বেশি । দক্ষিণ গোলার্ধের নেকড়ে উত্তর গোলার্ধের নেকড়ের চেয়ে কিছুটা ছোট হয় ।
নেকড়ে কোথায় দেখা যায়
আগে পৃথিবীর সর্বত্র নেকড়ে পাওয়া যেত । এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মেরু অঞ্চল, মরুভূমি— সর্বত্র ছিল এদের বিচরণ । এর কারণ, নেকড়ের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ । নানা ধরনের জলবায়ুতে এরা স্বচ্ছন্দে বাস করতে পারে । এদের দৃঢ় সামাজিক বন্ধনও এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে ।
নেকড়েরা পরিবারে বাস করে । একটি পরিবারে বাবা-মা এবং শাবকরা থাকে । এ ছাড়া অন্য নেকড়েরাও থাকে । ঘ্রাণ, দৃষ্টি ও শব্দ ছাড়াও এরা শারীরিক অঙ্গিভঙ্গির মাধ্যমে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে ।
হলে এরা মৃতদেহ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীদেরও খায়।
কুকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য
কয়োট (Coyote) দেখতে নেকড়ের মতো হলেও আকারে এর চেয়ে কিছুটা ছোট । এরা দলগতভাবে বাস করলেও শিকারের কাজটা একাকী করে থাকে । এদের আমেরিকা মহাদেশে দেখা যায় । কয়োট মাংসাশী প্রাণী হলেও ফল-মূল এবং পোকা-মাকড়ও খেয়ে থাকে । এদের শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি অসাধারণ । কয়োট তেমন হিংস্র নয় । অনেকেই এদের পোষ্য প্রাণী হিসেবে ঘরে রাখে । অন্যদিকে, র্যাকুন (Raccoon) বাস করে পূর্ব এশিয়ায় ।
এদের কান বেশ ছোট আফ্রিকার শিকারি কুকুরের পারিবারিক বন্ধন সবচেয়ে দৃঢ় । এদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ত্রিশ পর্যন্ত হতে পারে । নিজের এলাকা বলে এদের কিছু থাকে না । কোনো কুকুর একাকী শিকার করলেও সবাই ভাগাভাগি করে খায় । এ ছাড়া কোনো কুকুর সন্তান প্রসব করলে সবাই মিলে তার যত্ন নেয় ।
কুকুর পরিবারের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী হলো বনকুকুর বা ডোল (Dhole) । এই প্রাণীটি মানুষকে ভয় পেলেও বাঘ বা ভালুককে ভয় পায় না । কারণ, এরা। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে । বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, চীন, রাশিয়া ও অন্য কিছু দেশে সীমিত সংখ্যায় বনকুকুর দেখা যায় । মানুষের চেয়ে নেকড়ের ঘ্রাণশক্তি প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী কিছু বনকুকুর বাংলাদেশেও দেখা যায়।
- পেজ সূচিপত্র:
- কুকুর পরিবার
- শিয়াল
- লাল শিয়াল
- শাবকের যত্ন
- নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য
- নেকড়ে কোথায় দেখা যায়
- কুকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য
এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url