বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা এবং হিংস্রতা কুকুরের বড় পরিচয়

কুকুর পরিবার

বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা এবং হিংস্রতা কুকুর পরিবারের (Canidae Dog Family) বড় পরিচয় । কুকুর ছাড়াও এ পরিবারে আছে শিয়াল ও নেকড়ে, কয়োট, বনকুকুর এবং র‍্যাকুন।

👇


👆

এদের সবার আকৃতি কুকুরের মতো হওয়ায় সম্মিলিতভাবে এদের কুকুর পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর অন্য সব মহাদেশে এদের পাওয়া যায় । প্রায় পাঁচ কোটি বছর ধরে এরা পৃথিবীতে টিকে আছে । হিংস্র হলেও কুকুর পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন খুব দৃঢ় ।

শিয়াল

কুকুর পরিবারের ছোট সদস্য শিয়াল । ছোট পা, ত্রিভুজাকৃতির কান, ঘন ও মোটা লোম এবং লম্বা লোমশ লেজ এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য । আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বন-জঙ্গল ও মরুভূমিতে শিয়াল পাওয়া যায় । ছোট প্রাণী, যেমন ইঁদুর, খরগোশ, মুরগি, পাখির ডিম, ফল, বড় পোকা এবং পাখি শিয়ালের প্রধান খাবার । শিকার ছোট হওয়ায় এরা একাকী শিকার করতে পছন্দ করে ।


একেকটি শিয়াল পাঁচ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে নিজের বিচরণক্ষেত্র গড়ে তোলে । শিয়াল এবং কুকুর পরিবারের অন্য প্রাণীরা অত্যন্ত দ্রুতগামী । এরা ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে ।

লাল শিয়াল

শিয়ালের বিভিন্ন জাতের মধ্যে লাল শিয়ালই সবচেয়ে বড় । এরা দৈর্ঘ্যে তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে । তবে এদের ওজন খুব বেশি নয়- সর্বোচ্চ দশ কেজি । কালো কান ও পায়ের পাতা এবং লেজের উপর সাদা দাগ দেখে এদের চেনা যায় । এরা ইউরেশিয়া, আফ্রিকা, মেক্সিকো ও এর আশপাশের অঞ্চলে বিচরণ করে ।


লাল শিয়ালের খুব ভালো ঘ্রাণ, শ্রবণ এবং দৃষ্টিশক্তি রয়েছে । এর ফলে মানুষের বসতির খুব কাছেই সে লুকিয়ে থাকতে পারে । খেতের ইঁদুর (Field rat) এদের প্রিয় খাবার। এ কারণে রাতে কৃষিজমিতে প্রচুর শিয়ালের ডাক শোনা যায় ।

অন্যান্য শিয়াল

লাল শিয়াল ছাড়াও রয়েছে ধূসর শিয়াল, দ্রুতগামী শিয়াল এবং মেরু শিয়াল । ধূসর শিয়ালকে আমেরিকা অঞ্চলের বন-জঙ্গলে বেশি পাওয়া যায় । কুকুর পরিবারের মধ্যে এরাই একমাত্র গাছে চড়তে পারে । নাম শুনেই বোঝা যায়, দ্রুতগামী শিয়াল খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে । এরাও আমেরিকা অঞ্চলের বাসিন্দা । এরা লাল শিয়ালের চেয়ে আকারে ছোট ।

মেরু অঞ্চলের অন্যান্য প্রাণীর মতো মেরু শিয়ালের পশমও সাদা । তবে গ্রীষ্মে এদের পশমের রং বাদামি হয়ে যায় । ঘন ও মোটা পশম থাকায় এবং কান ছোট ও অনেক বেশি লোমশ হওয়ায় এদের দেহ তাপ ধরে রাখতে পারে । 

ফলে এদের শীতনিদ্রায় যেতে হয় না । বরং এসময় শীতনিদ্রায় থাকা অন্যান্য মেরু প্রাণীদের এরা শিকার করে । মরুভূমির শিয়ালদের কান অনেক বড় হয় । বড় কান দিয়ে তারা তাপ ছেড়ে দেয়, যা মরুভূমির গরমে তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করে

শাবকের যত্ন

শিয়াল স্তন্যপায়ী প্রাণী । এদের গর্ভধারণ সময় বেশ কম, মাত্র পঞ্চাশ দিন । হিংস্র হলেও মা ও বাবা শিয়াল তাদের শাবকদের নিয়ে একই সাথে বাস করে । তারা শাবকদের প্রতি খেয়াল রাখে এবং শিকার করতে শেখায় । শিয়াল দশ থেকে বারো বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে । 

নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য

নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য হলো নেকড়ে (Wolf) । দক্ষ শিকার, বুদ্ধিমত্তা এবং দৃঢ় সামাজিক বন্ধনের জন্য এরা খুব পরিচিত । এদের প্রধানত দুটি ভাগ আছে- ধূসর নেকড়ে ও লাল নেকড়ে । ধূসর নেকড়ে উত্তর গোলার্ধে বাস করে । এদের মধ্যে যেগুলো মেরু অঞ্চলে বাস করে, সেগুলো ধূসর মেরু হায়েনা নামে পরিচিত। বাকিরা জঙ্গলে থাকে । অন্যদিকে লাল নেকড়ে বাস করে আমেরিকায় ।

নেকড়ের চোয়াল ও পা খুব শক্ত । এরা শিয়াল থেকে কিছুটা বড় হয় । ফলে এদের ওজনও বেশি । দক্ষিণ গোলার্ধের নেকড়ে উত্তর গোলার্ধের নেকড়ের চেয়ে কিছুটা ছোট হয় ।

নেকড়ে কোথায় দেখা যায়

আগে পৃথিবীর সর্বত্র নেকড়ে পাওয়া যেত । এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মেরু অঞ্চল, মরুভূমি— সর্বত্র ছিল এদের বিচরণ । এর কারণ, নেকড়ের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ । নানা ধরনের জলবায়ুতে এরা স্বচ্ছন্দে বাস করতে পারে । এদের দৃঢ় সামাজিক বন্ধনও এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে ।


নেকড়েরা পরিবারে বাস করে । একটি পরিবারে বাবা-মা এবং শাবকরা থাকে । এ ছাড়া অন্য নেকড়েরাও থাকে । ঘ্রাণ, দৃষ্টি ও শব্দ ছাড়াও এরা শারীরিক অঙ্গিভঙ্গির মাধ্যমে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে ।

শিয়ালের ইঁদুর খাওয়াটা বাস্তুসংস্থানে খাদ্যশৃঙ্খলের (Food Chain) গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। দেখা গেছে, শিয়াল মেরে ফেললে কৃষিজমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্লেগ রোগের এক প্রধান বাহক ইঁদুর। এ কারণে আঠারো শতকে অস্ট্রেলিয়ায় প্লেগ রোগ দেখা দিলে ইঁদুর ধ্বংসের জন্য সেখানে প্রচুর লাল শিয়াল আমদানি করা হয়েছিল

শিয়ালের মতো মাংসাশী প্রাণীই নেকড়ের সবচেয়ে পছন্দ। তবে খাবারের অভাব
হলে এরা মৃতদেহ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীদেরও খায়

কুকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য

কয়োট (Coyote) দেখতে নেকড়ের মতো হলেও আকারে এর চেয়ে কিছুটা ছোট । এরা দলগতভাবে বাস করলেও শিকারের কাজটা একাকী করে থাকে । এদের আমেরিকা মহাদেশে দেখা যায় । কয়োট মাংসাশী প্রাণী হলেও ফল-মূল এবং পোকা-মাকড়ও খেয়ে থাকে । এদের শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি অসাধারণ । কয়োট তেমন হিংস্র নয় । অনেকেই এদের পোষ্য প্রাণী হিসেবে ঘরে রাখে । অন্যদিকে, র‍্যাকুন (Raccoon) বাস করে পূর্ব এশিয়ায় ।



এদের কান বেশ ছোট আফ্রিকার শিকারি কুকুরের পারিবারিক বন্ধন সবচেয়ে দৃঢ় । এদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ত্রিশ পর্যন্ত হতে পারে । নিজের এলাকা বলে এদের কিছু থাকে না । কোনো কুকুর একাকী শিকার করলেও সবাই ভাগাভাগি করে খায় । এ ছাড়া কোনো কুকুর সন্তান প্রসব করলে সবাই মিলে তার যত্ন নেয় ।


কুকুর পরিবারের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী হলো বনকুকুর বা ডোল (Dhole) । এই প্রাণীটি মানুষকে ভয় পেলেও বাঘ বা ভালুককে ভয় পায় না । কারণ, এরা। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে । বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, চীন, রাশিয়া ও অন্য কিছু দেশে সীমিত সংখ্যায় বনকুকুর দেখা যায় । মানুষের চেয়ে নেকড়ের ঘ্রাণশক্তি প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী কিছু বনকুকুর বাংলাদেশেও দেখা যায়।

    পেজ সূচিপত্র:
  • কুকুর পরিবার
  • শিয়াল
  • লাল শিয়াল
  • শাবকের যত্ন
  • নেকড়ে কুকুর পরিবারের আরেক সদস্য
  • নেকড়ে কোথায় দেখা যায়
  • কুকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্য





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭