প্রকৌশল ও প্রযুক্তি: কম্পিউটার


প্রকৌশল ও প্রযুক্তি: কম্পিউটার

আধুনিক কম্পিউটার চলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে।এ প্রযুক্তির মূল কথা হলো, সব তথ্যকে ০ আর ১ এ পরিণত করে তারপর ব্যবহার করতে হবে। এই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চলে বলেই এত দ্রুত আর সহজে কম্পিউটার অনেক কঠিন আর সময়সাপেক্ষ কাজ অতি দ্রুত করতে পারে|



কম্পিউটার

কম্পিউটার (Computer) শব্দের আক্ষরিক অর্থ গণনাকারী যন্ত্র । এই যন্ত্রটি এত দ্রুত গণনা করতে পারে যে, জীবনের সবক্ষেত্রে এর ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে । তাই বর্তমান যুগকে বলা হচ্ছে কম্পিউটারের যুগ । হিসাব, শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামো নির্মাণ, প্রকৌশল, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার জীবনকে করেছে সহজ, গতিশীল এবং সৃষ্টিশীল । বিজ্ঞানের নতুন সব শাখা যেমন, জিন প্রযুক্তি, মহাকাশ অভিযান, কোয়ান্টাম মেকানিক্স ইত্যাদির অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এই কম্পিউটার ।

বাইনারি পদ্ধতি

কম্পিউটারের গাণিতিক ভাষাটির নাম বাইনারি পদ্ধতি । আমরা দৈনন্দিন কাজে যে দশভিত্তিক (decimal) পদ্ধতি ব্যবহার করি, তাতে আছে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত দশটি সংখ্যা [Digit] । আর বাইনারিতে রয়েছে ০ আর ১ এই দুটি সংখ্যা । উদাহরণস্বরূপ, ডেসিমাল পদ্ধতির ২৫-কে বাইনারিতে প্রকাশ করলে তা হবে ১১০০১ । বাইনারি পদ্ধতিতে ০ বা ১ —কে বলা হয় বিট [Bit] বা বাইনারি ডিজিট। ৮টি বিটে হয় ১ বাইট [Byte]।

ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটার

বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মূলত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ । ডেস্কটপগুলো বেশ বড়সড় হয় বলে ডেস্ক বা টেবিলের উপর রেখে কাজ করতে হয়, আর ল্যাপটপ প্রয়োজনে কোলের ওপর রেখেও কাজ করা যায় এবং তুলনামূলকভাবে হাল্কা বলে সহজে বহন করা যায় । ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ যাই হোক না কেন- সব কম্পিউটারের রয়েছে ইনপুট, আউটপুট, প্রসেসর ও স্টোরেজ এই চারটি অঙ্গ ।

চার্লস ব্যাবেজ ও তার তৈরি কম্পিউটার

চার্লস ব্যাবেজ ও তার তৈরি কম্পিউটার গণনার কাজকে সহজ করার যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের ইতিহাস বেশ প্রাচীন । তবে আধুনিক “কম্পিউটার”-এর ইতিহাস কিন্তু বেশি দিনের নয় । ১৮৩৭ সালে বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage, 1791- 1871) প্রথম আধুনিক “কম্পিউটার”-এর ধারণা দেন । 



কিন্তু নানা কারণে তাঁর এই ধারণা বাস্তবায়িত হয়নি । বিশ শতকে ইলেক্ট্রনিক্সের আবিষ্কারের পর কম্পিউটার প্রযুক্তি তার আধুনিক রূপ পায় । ১৯৩৬ সালে আধুনিক | কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক অ্যালান টিউরিং (Allen Turing, 1912-1954) এলগরিদমের (গাণিতিক সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া) আধুনিক ধারণা দেন । তিনিই প্রথম আধুনিক কম্পিউটার কীভাবে এলগরিদমের সাহায্যে সমস্যা সমাধান করতে পারে (যেমন, গণনা করা), সে প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন । এরপর নানা বিজ্ঞানীর নানা চেষ্টা, ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্সের আবিষ্কার, সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির উন্নয়ন- এসবের হাত ধরে এসেছে আজকের কম্পিউটার ।

সফটওয়ার

একই ধরনের তথ্যের ওপর কাজ করতে পারে, এমন এক বা একাধিক প্রোগ্রাম মিলে তৈরি হয় সফটওয়্যার। আমরা লেখালেখি, ছবি দেখা, গান শোনা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরের বন্ধুদের সাথে কথা বলা- এসব কাজ করার জন্য নানা ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার করি। 


ধরা- ছোঁয়া যায় না বলেই এর নাম সফটওয়্যার। বিজ্ঞানীরা নানা প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে নানা প্রকৃতির সফটওয়ার তৈরি করেন । তবে কাজের ধরনের দিক থেকে সফটওয়্যার মূলত দুই ধরণের- অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) আর অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার (Application Software) । কম্পিউটারকে পরিচালনা করার কাজটি করে অপারেটিং সিস্টেম আর ব্যবহারকারীর নানা কাজের জন্য রয়েছে নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার ।

হার্ডওয়্যার

কম্পিউটারের যে অংশটি দেখা বা ধরা যায়, সেটিই হলো হার্ডওয়্যার । এটি নানা ধরনের যন্ত্রের সংমিশ্রণ হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন অংশ বাইরের সাথে কম্পিউটারের তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য সংরক্ষণ এবং নানা ধরনের গণনার কাজ করে ।


করে নানা প্রকৃতির সফটওয়ার তৈরি করেন। তবে কাজের ধরনের দিক থেকে সফটওয়্যার মূলত দুই ধরণের- অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) আর অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার (Application Software) । কম্পিউটারকে পরিচালনা করার কাজটি করে অপারেটিং সিস্টেম আর ব্যবহারকারীর নানা কাজের জন্য রয়েছে নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার ।

ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস

কি-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, ছবি আঁকার স্টাইলাস ইত্যাদির সাহায্য ব্যবহারকারী নানা ধরনের তথ্য কম্পিউটারকে সরবরাহ করে । এ কারণে এগুলোর নাম ইনপুট ডিভাইস (Input Device) । কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, যন্ত্রটি কী করছে । এ জন্যই মনিটর হলো কম্পিউটারের এক ধরনের আউটপুট ডিভাইস (Output Device) । 



তেমনিভাবে প্রিন্টারের সাহায্যে আমরা তথ্য ছাপিয়ে নিতে পারি, কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত রোবটের সাহায্যে নানা কাজ করতে পারি- এ সবই কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইসের কাজ ।

প্রসেসর

প্রসেসর (Processor) হলো কম্পিউটারের মস্তিষ্ক । ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে যে উপাত্ত (Data) আমরা কম্পিউটারকে সরবরাহ করি, তার নানা ধরনের গাণিতিক ব্যবহার, রূপান্তর ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজনীয় বা কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি (Information) সরবরাহের কাজ করে প্রসেসর । যে কম্পিউটারের প্রসেসর দ্রুত কাজ করতে পারে, সে কম্পিউটার তত শক্তিশালী । বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোকে বলা হয় সুপার কম্পিউটার। প্রসেসরের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করার গতিকে হার্জ (Hertz) এককে প্রকাশ করা হয় ।


স্টোরেজ ডিভাইস

কম্পিউটারে দুই ধরনের স্টোরেজ বা সংরক্ষণ ডিভাইস (Storage Device) থাকে । আমরা যখন কম্পিউটারে কাজ করি তখন উপাত্তগুলোকে সাময়িক সংরক্ষণ করার জন্য থাকে প্রাথমিক বা প্রধান মেমোরি ডিভাইস (Internal main memory Device) | 

কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার


কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার

4 ধরনের মেমোরি ডিভাইসগুলোর মধ্যে একটি থেকে প্রসেসর যেকোনো সময় উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে এবং মেমোরির যেকোনো স্থানেই উপাত্ত সংরক্ষণ করতে বা পড়ে নিতে পারে । এদের বলা হয় RAM (Random Access Memory) । আরেক ধরনের মেমোরি ডিভাইস আছে যেগুলো থেকে শুধুমাত্র উপাত্ত পড়ে নেয়া যায় কিন্তু লেখা যায় না । 

এদের বলা হয় ROM (Read Only Memory)। এ দুটোই প্রাথমিক মেমোরি ডিভাইসের উদাহরণ । কম্পিউটারে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে এসব মেমোরি থেকে উপাত্ত হারিয়ে যায় । আবার, উপাত্তগুলোকে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য থাকে সেকেন্ডারি মেমোরি ডিভাইস (Secondary Memory Device) যেমন, হার্ডডিস্ক, ডিভিডি, সিডি ইত্যাদি । 

এই ডিভাইসগুলো প্রধান মেমোরির মতো দ্রুত কাজ করে না । তবে এদের উপাত্ত সংরক্ষণের ক্ষমতা অনেক বেশি এবং তা স্থায়ী হয় ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭