দৈনন্দিন জীবনে বাইসাইকেল

বাইসাইকেল

বাইসাইকেল (Bicycle) বা সাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন । পা দিয়ে চালিত এই যানটি পরিবেশদূষণ করে না । বর্তমানে বিভিন্ন রকম সাইকেল ব্যবহৃত হচ্ছে ।

পরিবহনের পাশাপাশি সাইকেলনির্ভর কিছু খেলা এবং সার্কাসও রয়েছে । এ ছাড়া অনেকে শারীরিক ব্যায়ামের অংশ হিসেবেও সাইকেল চালায় । তবে মানুষ জন্মগতভাবে দুই চাকার উপর ভারসাম্য রাখতে পারে না বলে সাইকেল চালানো শিখতে হয় ।

চাকা

বাইসাইকেল একটি পরিবেশবান্ধব বাহন । নেদারল্যান্ডসের লোকেরা সবচেয়ে বেশি বাইসাইকেল ব্যবহার করেন। তাই দেখা যায়, সেখানে যানবাহনের কারণে পরিবেশ দূষণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম

ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ


বাইসাইকেলের হাতল থাকে । এটি দিক ঠিক রাখা ও পরিবর্তনে সাহায্য করে । পুরো সাইকেলের ভারসাম্যও এটির সাহায্যেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় । ব্রেকের শুরুটা হাতল থেকেই হয়ে থাকে । এ কারণে প্রয়োজনের সময় চালক সহজেই ব্রেকে চাপ দিয়ে সাইকেলের গতি পরিবর্তন করতে পারে ।

দুই চাকা

বাইসাইকেলের গোল চাকা দুটির কাঠামো সাধারণত ধাতব পাত দিয়ে তৈরি করা হয় । চাকার কেন্দ্রের সাথে পাত অনেকগুলো স্পোক (Spoke) দিয়ে সংযুক্ত থাকে । এই স্পোকগুলো পাতের গোল আকৃতি বজায় রাখতে সহায়তা করে । এ ছাড়া একাধিক স্পোক থাকার প্রধান কারণ হলো, উঁচু-নিচু জায়গায় চলার সময় যেন পাতের কোনো বিশেষ অংশে বেশি পরিমাণ চাপ পড়ে চাকা বেঁকে না যায় । চাকার উপর ব্রেক থাকে, যার সাহায্যে চলন্ত সাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

আধুনিক রেসিং সাইকেলের বিভিন্ন অংশ



কাঠামো

কাঠামো বাইসাইকেলের প্রধান অংশ । অধিকাংশ সাইকেলের কাঠামো ধাতব পাত দিয়ে তৈরি । পাতগুলোতে বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়, যেন মরিচা না পড়ে । শিশুদের সাইকেলের কাঠামো সাধারণত কিছুটা ভারী ও শক্ত হয়, আবার রেসিং প্রতিযোগিতার সাইকেলগুলো হয় শক্ত কিন্তু হালকা, যেন বাতাসের বাধা কম অতিক্রম করতে হয় । কাঠামোর মাঝখানে থাকে। আসন । অনেক সাইকেলেই এ আসনটি উপরে ওঠানো বা নিচে নামানো যায় । আসনের পেছনেই থাকে ছোট পণ্যবাহী জায়গা বা ক্যারিয়ার (Carrier) । পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি অনেক সময় এখানে মানুষও বহন করা হয় ।

যেভাবে চলে

পেডাল ও চেইনের সাহায্যে আধুনিক সাইকেল চালানো হয় । পেডাল ও পেছনের চাকার কেন্দ্রে গিয়ার থাকে । এই গিয়ার আবার স্প্রোকেট নামেও পরিচিত । গিয়ারের উপর দিয়ে চেইন পরানো হয় । ফলে পেডাল ও পেছনের চাকার মধ্যে সংযোগ সাধিত হয় । পেডাল ঘোরালে পেছনের চাকাটি সামনের দিকে বল প্রয়োগ করে । ফলে সামনের চাকাও ঘুরতে শুরু করে এবং সাইকেল সামনে এগিয়ে যায় । অর্থাৎ পেছনের চাকাই সাইকেলের মূল চালক । এ কারণে জোরে পেডাল ঘোরানো অবস্থায় হঠাৎ করে সামনের চাকায় ব্রেক চাপলে সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।

পাহাড়ি সাইকেল

কম পরিশ্রমে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য যেমন গিয়ার সাইকেল ব্যবহার করা হয়, তেমনি পাহাড়ে ওঠার জন্য বিশেষ ধরনের সাইকেল আছে । তবে রেসিং সাইকেল এবং পাহাড়ি সাইকেলের গঠনে কিছুটা পার্থক্য আছে । শক্তি হলো গতি ও টর্ক-এর গুণফল । যখন দ্রুত চলতে হয়, তখন শক্তির প্রায় পুরো অংশটাই গতিতে চলে যায় । পাহাড়ে ওঠার সময় গতির পরিমাণ কমে যায়, তখন শক্তির বড় অংশ টর্কে বা উপরে ওঠার জন্য ব্যয় হয় ।

পাহাড়ের জন্য ব্যবহৃত সাইকেল তুলনামূলকভাবে ছোট, কিন্তু অনেক বেশি শক্ত ও মজবুত হয় । এগুলোতে ঝাঁকুনি প্রতিরোধক (Shock Absorber) ব্যবস্থা থাকে । এটি স্প্রিং দিয়ে তৈরি, যা অমসৃণ জায়গায় চলার কাজটা সহজ করে দেয় ।

গিয়ার সাইকেল

প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা সাইকেলগুলোতে একাধিক গিয়ার থাকে । এগুলো গিয়ার সাইকেল নামে পরিচিত । এর সাহায্যে অল্প শক্তিতে পেডাল ঘুরিয়েই সাইকেলকে অনেক বেশি গতিতে চালানো যায় । কোনো কোনো সাইকেলে ২৭টি পর্যন্ত গিয়ার থাকে । গিয়ার | সাইকেলগুলোতে বেল বা ঘণ্টির পাশেই আরেকটি ছোট চাকতি থাকে । এটির সাহায্যে গিয়ার পরিবর্তন করা হয় ।

চাকা

শুরুর দিকে সাইকেলের চাকা ছিল লোহার পাত দিয়ে তৈরি । উঁচ-নিচু জায়গায় সাইকেল চালালে কয়েক দিনের মধ্যেই চাকাগুলো বেঁকে যেত । গরুর গাড়ি বাঁকা চাকা দিয়ে চালানো সম্ভব হলেও বাঁকা চাকার বাইসাইকেলে ভারসাম্য রাখা সম্ভব নয় । ১৮৮৭ সালে স্কটিশ প্রকৌশলী জন বয়েড ডানলপ (John Boyd Dunlop) রাবারের চাকা উদ্ভাবন করেন । রাবারের চাকা বাতাস-ভর্তি করে ফুলিয়ে ব্যবহার করা হয় । রাবারের চাকা উদ্ভাবনের পর বাইসাইকেল খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ।


ইতিহাসের পাতায়

বাইসাইকেল বহু মানুষের সম্মিলিত উদ্ভাবন । প্রথম বাইসাইকেল তৈরি করেন। জার্মান প্রকৌশলী ব্যারন কার্ল ফন ড্রেইজ ( Baron Karl von Drais) । তাঁর নির্মিত সাইকেলটি ছিল কাঠের । পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে এটি চালাতে হতো । পেডালচালিত সাইকেল প্রথম উদ্ভাবন করেন ফ্রান্সের পিয়ের মিশু'র এবং বিয়ের পিয়ের লামেন্ট | পিয়ের মিশু (Pierre Michaux) এবং পিয়ের লামেন্ট (Pierre Lallement) । তবে সেখানে পেডাল সামনের চাকার সাথে লাগানো ছিল । পেছনের চাকাচালিত বাইসাইকেল প্রথম উদ্ভাবন করেন স্কটিশ প্রকৌশলী টমাস ম্যাককল (Thomas McCall)

একবার মাত্র শিখতে হয়

সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা শেখার সময় আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সেরেবেলাম অংশের স্নায়ুকোষগুলোর এক্সন ও ডেনড্রাইট-এর মধ্যে নতুন কিছু সংযোগ তৈরি হয় । এই সংযোগগুলো সারা জীবন থেকে যায় । ফলে পরবর্তীকালে সাইকেল চালানোর সময় শরীরের কোনো অংশ কতটুকু বাঁকিয়ে ভারসাম্য রাখতে হবে, সেটা মস্তিষ্ক আগে থেকেই বুঝে যায় । তবে কোনো দুর্ঘটনায় যদি সেরেবেলামের কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এই সংযোগগুলো নষ্ট হয়ে যায় । তখন ওই ব্যক্তিকে নতুন করে সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা শিখতে হয় ।

অসাধারণ যান

পরিবেশগত দিক থেকে বাইসাইকেল খুব কার্যকর একটি বাহন । এটি পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না । চালক পেডালে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করেন, তার প্রায় ৯৫ ভাগ শক্তিই চাকায় স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ ক্ষয় খুব সামান্য । তবে গিয়ার ব্যবহার করলে ক্ষয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায় । এ ছাড়া নিয়মিত সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭