অনু পরমাণুর আদি, অন্ত, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

ভূমিকাভূমিকা: অনু পরমানু আদি অন্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুবই জটিল এবং কঠিন বিষয়। এই পৃথিবীর যে কোন বস্তুকেই ভাঙলে যা পাওয়া যাবে তা হল অণু পরমাণু। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford, 1871 -1937) পরমাণুর আকার ও গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। দুই বা তার বেশি পরমাণু মিলে তৈরি হয় অণু। বস্তুর ক্ষুদ্রতম অংশ বা একককে বলা হয় পরমাণু।

অণু ও পরমাণু

অণু ও পরমাণুএই মহাবিশ্বের সব কিছু কী দিয়ে তৈরি, সেটা নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের আগ্রহ রয়েছে। একটি বস্তুকে কতটুকু ক্ষুদ্র কণায় ভাঙা সম্ভব, তা নিয়েও বহুদিন ধরে গবেষণা চলছে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, এই মহাবিশ্বের সব পদার্থ অণু এবং পরমাণু (Molecules and Atoms) দিয়ে তৈরি। বস্তুর সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশ বা একককে বলা হয় পরমাণু। আর দুই বা তার বেশি পরমাণু মিলে তৈরি হয় একটি অণু। এই অণু-পরমাণু এতই ছোট যে এদের খালি চোখে তো নয়-ই, শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থেকে এদের আকৃতি ও গঠন সম্বন্ধে জানা যায়।

অণু ও পরমাণুর ধারণা

অণু ও পরমাণুর ধারণাপ্রতিটি বস্তু যে খুব ছোট বস্তুকণা দিয়ে গঠিত - এ ধারণা নতুন নয়। প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা এ রকম ক্ষুদ্র কণার কথা ভেবে আসছেন। গ্রিক ও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে বেশ কিছু তত্ত্ব দিয়েছিলেন, যদিও তাঁরা সেগুলোর সত্যতা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারেননি। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস বলেন যে, কোনো কিছুকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে ছোট অংশে ভাঙা সম্ভব নয়। তিনি তার নাম দেন পরমাণু (Atom)। পরমাণু সম্পর্কে প্রথম বিজ্ঞানসম্মত মতামত দেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন (John Dalton, 1766-1844)। তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি মৌল সরল পরমাণু ও প্রতিটি যৌগ যৌগিক পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং বিক্রিয়ার সময় এই পরমাণুগুলো থেকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নতুন পরমাণু তৈরি হয়। তবে তিনি পরমাণুর আকৃতি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি।

এরপর ১৮৬৬ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী। লোশমিড (Johann Josef Loschmidt, 1821-1895) প্রথমবারের মতো বাতাসের অণুর ভর মাপতে সক্ষম হন। এর চার বছর পর রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডিলিভ (Dmitri Mendeleev, 1834-1907) ও জুলিয়াস লুথার মেয়র (Julius Lothar Meyer, 1830-1895) পরমাণুর ভর ব্যবহার করে মৌলিক পদার্থগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেন, যা পর্যায় সারণি নামে পরিচিত।

পরমাণু মডেল ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী

পরমাণু মডেলবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford, 1871 -1937) পরমাণুর আকার ও গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। তিনি নানা পরীক্ষা করে দেখেন যে পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা বা প্রোটন আছে। আর এর চারপাশে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকা ঋণাত্মক আধানকে বলে ইলেকট্রন। 


একটি পরমাণু সমপরিমাণ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানযুক্ত হওয়ায় তার মোট আধান শূন্য। তিনি বোঝার সুবিধার্থে পরমাণুকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করেন, যেখানে নিউক্লিয়াস হলো সূর্য, আর ইলেকট্রনগুলো হলো গ্রহ। ইলেকট্রনগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে শক্তি ত্যাগ বা গ্রহণ করে নিউক্লিয়াসের কাছে বা দূরে যেতে পারে।

পরমাণু

পরমাণুবস্তুর ক্ষুদ্রতম অংশ বা একককে বলা হয় পরমাণু। একাধিক পরমাণু মিলে তৈরি হয় একটি অণু কোনো বস্তুর পরমাণুকে ভাঙলে বস্তুটি তার বৈশিষ্ট্য হারায় এবং তখন তাকে বলে কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সব মৌলের পরমাণুই আলাদা। তবে পরমাণুর গঠনে এদের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। সব পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে অতি ক্ষুদ্র কণা প্রোটন এবং নিউট্রন থাকে। নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। একই মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে। তবে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা আলাদা । বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ১১৮টি মৌলিক পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ১১৮টি ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু আবিষ্কৃত হয়েছে। হাইড্রোজেন পরমাণু এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।

বোর মডেল

বোর মডেলরাদারফোর্ডের মডেল অনুযায়ী ইলেকট্রনগুলো সর্পিলাকার পথে নিউক্লিয়াসে মিলিয়ে যাওয়ার কথা। এটি একটি বড় ভুল। এ ভুলটি ঠিক করেন তাঁরই ছাত্র নিলস বোর (Niels Bohr, 1885-1962)। তিনি বলেন যে ইলেকট্রনের গতিপথ বিচ্ছিন্ন। এরা নিউক্লিয়াসের চারপাশে নির্দিষ্ট বৃত্তাকার শক্তিস্তরে অবস্থান করে। শক্তি নিয়ে বা ছেড়ে দিয়ে ইলেকট্রন লাফ দিয়ে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যায়। অতএব, শক্তির এ আদান-প্রদান একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পূর্ণ গুণিতক আকারে হয়। তাই দুটি স্তরের মাঝামাঝি কোথাও থাকা অর্থাৎ অবিচ্ছিন্ন পথে। চলা ইলেকট্রনের পক্ষে সম্ভব নয়।

অণু

অণুপরমাণুর সংখ্যা সীমিত। তবে অণুর সংখ্যা অগণিত। দুই বা তার বেশি পরমাণু মিলে তৈরি হয় অণু। যেমন, নিষ্ক্রিয় গ্যাস ছাড়া অন্য যে কোনো মৌলিক গ্যাসের অণু দ্বিপরমাণুক। যেমন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি পদার্থগুলোর দুটি পরমাণু মিলে একটি অক্সিজেন অণু বা একটি নাইট্রোজেন অণু তৈরি হয়। আবার একটি সোডিয়াম পরমাণু এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু মিলে তৈরি হয় একটি সোডিয়াম। ক্লোরাইড বা খাবার লবণের অণু।

 👌 রাদারফোর্ড ও বোর-এর দেওয়া পরমাণু মডেলের মূল পার্থক্য হলো ইলেকট্রনের শক্তি নেওয়া দেওয়ার পরিমাণের মধ্যে। সর্পিলাকার পথ বা নির্দিষ্ট সংখ্যক বিচ্ছিন্ন স্তরে অবস্থান তার অনুসিদ্ধান্ত মাত্র  👌

 👌 যদিও প্রথমে পারমাণবিক ভর অনুসারে পর্যায় সারণি তৈরি করা হয়, এর মূল ভিত্তি কিন্তু পরমাণুর ইলেকট্রন সজ্জা 👌

 👌 একটি সালফার পরমাণু, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং চারটি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে গঠিত সালফিউরিক এসিডের অণু  👌

অণুর আকৃতি

অণুর আকৃতিআকৃতি কেমন হবে, তা নির্ভর করে পরমাণুর সংখ্যার উপর। যেমন, ক্ষুদ্রতম পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত হয় বলে হাইড্রোজেন গ্যাসের অণুর আকারও সবচেয়ে ছোট। আবার চিনি বা শর্করা অনেকগুলো পরমাণু নিয়ে গঠিত। ফলে এর অণুর আকৃতি বেশ বড় । কিছু কিছু। প্লাস্টিক বা পলিমার কার্বন পরমাণুর শিকল দিয়ে গঠিত হয়। এগুলোর দৈর্ঘ্য এক মিটারের চেয়েও বেশি হয়ে থাকে।

অণুর বৈশিষ্ট্য

অণুর বৈশিষ্ট্যঅণুতে উপস্থিত পরমাণুগুলোই নির্দিষ্ট করে দেয় অণুটির বৈশিষ্ট্য কেমন হবে। তবে ওই পরমাণুর সাথে অণুটির বৈশিষ্ট্যগত কোনো মিল থাকে না। একটি অণু থেকে যে কোনো একটি পরমাণু সরিয়ে নিলে বা একটির পরিবর্তে অন্য একটি পরমাণু নিয়ে আসলে, ওই অণুটির বৈশিষ্ট্যে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন, দুটি অক্সিজেন পরমাণু মিলে অক্সিজেন অণু তৈরি হয়। এ দুটি পরমাণুর সাথে একটি কার্বন পরমাণু যুক্ত করে দিলেই তৈরি হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার এই কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে একটি অক্সিজেন পরমাণু সরিয়ে নিলে হয় কার্বন মনোক্সাইড, যা আরও বিষাক্ত।

👌 বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও  বোর 👌


সর্বশেষ বা উপসংহার

উপসংহারপ্রতিটি বস্তু যে খুব ছোট বস্তুকণা দিয়ে গঠিত- এ ধারণা নতুন নয়। প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা এ রকম ক্ষুদ্র কণার কথা ভেবে আসছেন। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে অতি ক্ষুদ্র কণা প্রোটন এবং নিউট্রন থাকে। নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। একই মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে। এখন পর্যন্ত ১১৮টি ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু আবিষ্কৃত হয়েছে। হাইড্রোজেন পরমাণু এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭