ব্যায়াম-শরীর ও মন
ব্যায়াম
নিয়মিত কিছু নির্দিষ্ট ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করাকে বলা হয় ব্যায়াম বা শরীরচর্চা (Physical Exercise) । ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে । অনেকে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করে থাকেন ।
খেলোয়াড়েরা ব্যায়াম করেন তাঁদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য । বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় । শারীরিক ব্যায়ামের একটি বিশেষ ধারা হলো যোগব্যায়াম, যা এই উপমহাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য ।
বায়ুযোগী ব্যায়াম
শরীরচর্চার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । শরীরের সার্বিক শক্তি ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে ব্যায়াম, তাকে বলা হয় বায়ুযোগী (Aerobic) ব্যায়াম । শরীরের প্রায় সব মাংসপেশিকেই কাজ করতে হয় বলে এতে অক্সিজেনও বেশি লাগে । অক্সিজেনের সাহায্যেই পেশি খাবার বা জমে থাকা চর্বি পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করে ।
আবার প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসকেও পরিশ্রম করতে হয় । ফলে শরীরের এ দুটি প্রধান অঙ্গেরও ব্যায়াম হয় । এ ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে আছে হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি ।
অ-বায়ুযোগী ব্যায়াম
এ ধরনের ব্যায়াম শরীরের নির্দিষ্ট কিছু মাংসপেশিকে নিয়ে কাজ করে । যেমন, ভারোত্তলন বা বাধা প্রদান করে ব্যায়াম করার ফলে বাহু ও কাঁধের মাংসপেশির উপর বেশি চাপ পড়ে । নিয়মিত এ ব্যায়াম করার পর ওই সব মাংসপেশি বেড়ে যায় ।
অল্প কিছু মাংসপেশির উপর কাজ করে বলে এ ধরনের ব্যায়ামে খুব বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয় না । ফলে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসকেও ততটা পরিশ্রম করতে হয় না । মাংসপেশির উপর চাপ পড়ে বলে অ-বায়ুযোগী ব্যায়াম বেশিক্ষণ করা যায় না । করতে গেলে ওই অঙ্গটিতে ব্যথা লাগে । এ ছাড়া, অতিরিক্ত চাপে মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । তবে এ ধরনের ব্যায়ামের একটি ভালো দিক হলো, এর ফলে মাংসপেশির শক্তি বাড়ে এবং হাড়ের জোড়ায় আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমে যায় ।
নমনীয় ব্যায়াম
কিছু ব্যায়াম আছে, যেগুলো করার সময় খুব বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয় না । সাধারণত হাড়ের জোড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এ ধরনের ব্যায়াম করা হয় । এসব ব্যায়াম নমনীয় ব্যায়াম (Flexibility Exercises) নামে পরিচিত । এ ধরনের ব্যায়াম শরীরের জড়তা কমায়|
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়
বায়ুযোগী ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো । কারণ, এগুলোতে শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয় । বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত হাঁটাচলা, সীতার ইত্যাদির পরামর্শ দিয়ে থাকেন । প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার কারণে রক্তনালিতে কোলস্টেরল জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে । কিন্তু ব্যায়াম করার ফলে কোষের অনেক বেশি পুষ্টি প্রয়োজন হয় । কোষ তখন জমে থাকা কোলস্টেরলকে ব্যবহার করে ।
ওজন হ্রাস ও মস্তিষ্ক
দুই ধরনের ব্যায়ামেই শরীরের ওজন কমে যায় । কারণ, শরীরে জমে থাকা চর্বিই অতিরিক্ত ওজনের জন্য প্রধানত দায়ী । গ্রহণ করা অতিরিক্ত অক্সিজেন পোড়ানোর জন্য কোষ সেই জমে থাকা চর্বি ব্যবহার করতে থাকে । মস্তিষ্কের উপরও ব্যায়ামের প্রভাব রয়েছে । ব্যায়াম করার ফলে শরীরের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় । মস্তিষ্কেও রক্ত সরবরাহ বাড়ে । ফলে সেখানে নতুন স্নায়ুকোষ তৈরির হার বেড়ে যায় । এ ছাড়া মস্তিষ্কে অন্য যেসব যৌগ থাকে, সেগুলোর পরিমাণও বাড়ে । নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, মাংসপেশি ও হাড়ের সুরক্ষা হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রার কোলস্টেরল, ডায়াবেটিস, অস্টিয়োপোরোসিস ইত্যাদি সমস্যায় ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর|
যোগব্যায়াম
যোগব্যায়াম করলে শরীর যে শুধু সুস্থ থাকে তা নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে এ ব্যায়াম করার ফলে শরীর হয়ে ওঠে অনেক স্থিতিস্থাপক । এ ক্ষেত্রে আমাদের হাড়কে জড়িয়ে থাকা লিগামেন্টগুলো অনেক কার্যকর হয়ে ওঠে । আমাদের হাড়ের সব সংযোগস্থলকে ঘিরে থাকে এই লিগামেন্ট । এ কারণেই আমরা আমাদের বিভিন্ন অঙ্গকে বিভিন্ন দিকে নাড়াতে বা মোচড়াতে পারি । এ লিগামেন্ট যত নরম হবে, অঙ্গ তত স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা যাবে ।
লিগামেন্টে দুই ধরনের টিস্যু থাকে- হলুদ ও সাদা। সাদা টিস্যু শক্ত, এটি ভার বহন করে । হলুদ টিস্যু নরম, এটি নির্দিষ্ট অঙ্গ বা হাড় কতটুক বাঁকানো যাবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে । যোগব্যায়ামের মাধ্যমে এ দুই ধরনের টিস্যুই অনেক কার্যকর হয়ে ওঠে ।
ফিটনেস
ফিটনেস (Fitness) বলতে বোঝায় সুস্বাস্থ্য বা ভালো শারীরিক অবস্থা । শরীর সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকলে মানুষ তার কাজগুলো। সুষ্ঠুভাবে করতে পারে । ফিটনেসের জন্য যে দুটো জিনিস সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হলো শরীরচর্চা বা ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাদ্য । অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করে, তবে এটাই ব্যায়ামের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় । শরীরচর্চার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ফিটনেস অর্জন করা, যেন কর্মক্ষমতা বাড়ে, শরীর রোগমুক্ত থাকে এবং মনে যেন একটা ভালো থাকার অনুভূতি থাকে ।
শরীর ও মন
ব্যায়াম শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজন । দেখা গেছে যে, ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার সময় মানুষের মস্তিষ্ক সতেজ থাকে এবং মনও ভালো থাকে । তা ছাড়া, নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্নায়ুচাপ (Tension) কমে এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে । প্রাচীন গ্রিকরা এটা আগেই বুঝতে পেরেছিল ।
তাই তারা শরীর ও জ্ঞানের চর্চা একই জায়গায় করত । এসব জায়গাকে তারা বলত জিমনেসিয়াম । তারা বলত সুস্থ শরীরে সুন্দর মন' । প্লেটো,এরিস্টটলের মতো অনেক মহান পন্ডিতরা তাঁদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই সব জিমনেসিয়ামের মাধ্যমে ।
এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url