রোজা অধ্যায়-সাওম
পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
রোজা অধ্যায় : সাওম
রমযানের সাওম ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে । মহান আল্লাহর বাণী : হে মু'মিনগণ ! তোমাদের জন্য সিয়াম ফরয করা হল, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হও (২:১৮৩)
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭০
কুতায়বা ইবন সা'ঈদ (র)... তালহা ইবন 'উবায়দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত যে, এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূলুল্লাহ -এর নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা'আলা আমার উপর কত সালাত ফরয করেছেন? তিনি বললেন : পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা'আলা ফরয করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ বললেন : রমযান মাসের সাওম; তবে তুমি যদি কিছু নফল সিয়াম আদায় কর তা হল স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন? রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহর তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমারও না। রাসূলুল্লাহ বললেন : সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭১
মুসাদ্দাদ (র)... ইবন 'উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী 'আশূরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয় । আবদুল্লাহ (র) এ সিয়াম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণত সিয়াম পালন করতেন, তার সাথে মিল হলে করতেন দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সে-ও পুরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ রোমা। বললেন : যার ইচ্ছা আশূরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না। সিয়াম ঢাল স্বরূপ । সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।
১১৮৫. পরিচ্ছেদ : সাওম (গোনাহের) কাফ্ফারা
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭৪
'আলী ইবন 'আবদুল্লাহ (র)... হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন 'উমর (রা) বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নবী -এর হাদীসটি কার মুখস্থ আছে? হুযায়ফা (রা) বললেন, আমি নবী -কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সিয়াম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। 'উমর (রা) বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আন্দোলিত হতে থাকবে। হুযায়ফা (রা) বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। 'উমর (রা) বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা (রা) বললেন, ভেঙ্গে যাবে। 'উমর (রা) বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাসরূক (র)-কে বললাম, হুযায়ফা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করুন, ‘উমর (রা) কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যে রূপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত ।
১১৮৬ সাওম পালনকারীর জন্য রায়্যান
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭৫
খালিদ ইবন মাখলাদ (র)... সাহল (রা) থেকে বর্ণিত, নবী বলেন : জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে । তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে ।
হাদিস নম্বর বুখারী :১৭৭৬
ইবরাহীম ইবন মুনযির (র)... আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন : যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম । অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে । যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রায়্যান দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদকা দানকারী, তাকে সদকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বাকর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ বললেন : হাঁ। আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে।
রমযান বলা হবে, না রমযান মাস বলা হবে? আর যাদের মতে উভয়টি বলা যায়। নবী (স:) বলেছেন : যে ব্যক্তি রমযানে সিয়াম পালন করবে এবং আরো বলেছেন : তোমরা রমযানের আগে সিয়াম পালন করবে না।
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭৭
কুতায়বা (র)... আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন : যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় ।
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭৮
ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র (র)... আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন : রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানগুলোকে ।
হাদিস নম্বর বুখারী : ১৭৭৯
ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র (র)... ইবন 'উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র (র) ব্যতীত অন্যরা লায়স (র) থেকে 'উকায়ল এবং ইউনুস (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে ।
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় নিয়তসহ সিয়াম পালন করবে ‘আয়িশা (রা) নবী থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন নিয়ত অনুযায়ীই লোকদের উঠানো হবে।
চলমান ... ... ... ... ... ..
এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url