সাপকে ভয় নয় জয় করুন-সাপ নিয়ে যত কথা
বিষাক্ত ছোবলের জন্য সাপ (Snake) বেশি পরিচিত। তবে অধিকাংশ সাপেরই বিষ থাকে না। এটি সরীসৃপ প্রাণী।এর পা নেই। সাপের দেহ বেশ লম্বাকৃতির হয়। হিমশীতল এলাকা ছাড়া সব স্থানেই সাপ দেখা যায় । সংখ্যা ও বৈচিত্র্যে বিশাল হলেও নগরায়ণের কারণে সাপের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে এবং বিভিন্ন প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে।
উৎপত্তি
বিজ্ঞানীদের ধারণা, লিজার্ড থেকে সাপের উৎপত্তি, যদিও লিজার্ডের মতো সাপের বহিঃকান থাকে না । লিজার্ড ও সাপের জিহ্বাতেও পার্থক্য রয়েছে । নিরাপত্তার জন্য এবং চোখকে ভিজিয়ে রাখতে স্তন্যপায়ীদের মতো লিজার্ড কিছুক্ষণ পরপর তার চোখ বন্ধ করে। তবে সাপ তার চোখ কখনো বন্ধ করে না । এর চোখের উপর একটি আঁশটে পর্দা থাকে, যেটি তার চোখকে নিরাপদ রাখে ।
স্বভাব ও খাদ্যগ্রহণ
সাপ শীতল রক্তের প্রাণী । দেহের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ এরা খাবার থেকে সংগ্রহ করে না, বরং সূর্যের তাপ দিয়ে দেহকে উষ্ণ রাখে । এ কারণে দিনের বেলা সাপ ঘুরে বেড়ায় এবং রাতে গর্তের ভেতর লুকিয়ে থাকে । তাপের জন্য খাবারের উপর নির্ভরশীল না হওয়ায় এরা না খেয়ে অনেক এমারাল্ড সাপ গাছে বাস করে ব্যান্ডি ব্যান্ডি সাপ সাপে কাটলে ক্ষত স্থানের চিহ্ন দেখে সাপটি বিষধর না বিষহীন তা বোঝা যায়। ক্ষতস্থানে যদি পাশাপাশি দুটি। দাতের দাগ থাকে তবে ধরে নেয়া যায় সাপটি বিষধর।
আর যদি সেখানে লম্বা কাটা বা আঁচড় কাটার দাগ থাকে তবে বুঝতে হবে সাপটি বিষধর নয় দিন বেঁচে থাকতে পারে। সাপ মাংসাশী প্রাণী । কিছু কিছু সাপ মাসে, এমনকি বছরে মাত্র একবার খেয়ে থাকে । পোকামাকড়, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, লিজার্ড এবং পাখি সাপের প্রিয় খাবার । অস্ট্রেলিয়ার ব্যান্ডি ব্যান্ডি সাপ শুধু অন্য সাপ খেয়ে বাঁচে । কিং কোবরাও অন্য সাপ খেয়ে থাকে । কিছু কিছু সাপের প্রিয় খাবার হলো অন্যদের ডিম । অধিকাংশ সাপের চোয়াল মাথার চেয়ে বেশ বড় হওয়ায় এরা শিকারকে একবারে গিলে ফেলার চেষ্টা করে । আফ্রিকার শিলা অজগরের চোয়াল এতটাই বড় যে এটি এন্টিলোপ পর্যন্ত খেতে পারে ।
সাপে কামড়ালে রোগীকে বাঁচানোর জন্য যেসব ওষুধ কার্যকর হয়, সেগুলো সাপের বিষ থেকেই তৈরি।
শারীরিক গঠন
সাপের দেহ কেরাটিনের স্বচ্ছ পর্দা বা খোলস দিয়ে ঢাকা থাকে । এই পর্দার কারণে সাপের দেহ থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে না । প্রতিবছর এদের নতুন খোলস তৈরি হয় । সাপের মেরুদণ্ড খুব নরম এবং স্থিতিস্থাপক । এদের মাংসপেশিও খুব নমনীয়, তাই এরা সহজেই ছোট গর্তের মধ্যে কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকতে পারে । সাপ তার তিন প্রকোষ্ঠের হৃৎপিণ্ড নাড়াচাড়া করতে পারে এবং এর শ্বাসতন্ত্র (ফুসফুস ও শ্বাসনালি) খুব ছোট হয় । এ ছাড়া সাপের চোয়াল পেশি ও লিগামেন্ট দিয়ে খুলির সাথে যুক্ত থাকে । এর ফলে এরা এদের মুখ ১৫০ ডিগ্রি কোণ পর্যন্ত হাঁ করতে পারে । এ কারণেই বড় বড় প্রাণীকে গিলে ফেলতে সাপের কোনো সমস্যা হয় না ।
সাপের বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি
প্রায় আড়াই হাজার প্রজাতির সাপ আছে । মাটিতে, নদী-সাগরে, গাছে, মরুভূমি, এমন কি মেরুর বরফ-ঢাকা অঞ্চলেও সাপ দেখা যায় । এন্টার্কটিকা মহাদেশে সাপ না থাকলেও অন্যান্য মেরু অঞ্চলে প্রচুর সাপ দেখা যায় ।
সব সাপের দেহের আকৃতি একই রকম । স্থলে বাস করা সাপের দেহ ও মাথা বেশ লম্বা এবং শক্তিশালী, যেন মাটির উপর দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারে । জলজ সাপের দেহ অবশ্য কিছুটা খর্বাকৃতির হয়, যা তাকে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে । গাছে বাস করা সাপের দেহ আবার বেশ লম্বা এবং চিকন হয়, যা তাকে লাফ দিতে এবং ক্ষিপ্র হতে সাহায্য করে । আর কিছু সাপ খুব ধীরগতির- যেমন অজগর (Python)। এরা সহজে নড়াচড়া করে না। এ ধরনের সাপ বেশ বড় হয়ে থাকে । তবে সবচেয়ে বড় সাপ হলো অ্যানাকন্ডা (Anaconda ) । অজগর ও অ্যানাকন্ডা ত্রিশ ফুটেরও বেশি লম্বা হয় । অন্যদিকে সবচেয়ে ছোট সাপটির দৈর্ঘ্য মাত্র চার ইঞ্চি । এটি পাওয়া গেছে ক্যারিবীয় অঞ্চলের বারবাডোস দ্বীপে ।
সাপের জিহবা কেমন দেখায়
বোয়া, অজগর এবং অ্যানাকোন্ডা ভিন্ন ধরনের সাপ। এদের দেহ বিশাল এবং বিষহীন। এরা কামড় দেওয়ার বদলে শিকারকে শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে পিষে মারার চেষ্টা করে। প্রচণ্ড জোরে পেঁচিয়ে ধরার ফলে শিকার শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় সব সাপের বিষ (Venom) থাকে না । বিষাক্ত সাপের (Venomous Snake) উপরের ফাঁপা দাঁত দুটিকে বলা হয় বিষদাঁত (Fang) ।
শিকারকে আঘাত করার সময় উপরের চোয়ালে থাকা গ্রন্থি থেকে বিষ এই দাঁতের মধ্য দিয়ে শিকারের শরীরে যায় । কিছু কিছু সাপের বিষ এতই তীব্র যে মুহূর্তের মধ্যে শিকারের মৃত্যু হতে পারে। র্যাটল স্নেক (Rattle Snake) এবং কোবরা (Cobra) মারাত্নক বিষাক্ত সাপ । বিষছোড়া কোবরার (Spitting Cobra) বিষদাঁত থাকে তবে এরা শিকারের দিকে বিষ ছুড়ে মারে । এদের দশ ফুট দূর থেকেও বিষ ছুড়তে দেখা গেছে । এদের প্রধান লক্ষ্য থাকে শিকারের চোখ । এই বিষ এতই ক্ষতিকর যে চোখ নষ্ট করে দিতে পারে ।
জিহবা কেন নাড়ায়
সাপ সব সময় তার জিহ্বা মুখ থেকে বের করে নাড়াতে থাকে । এর সাহায্যে বাতাস থেকে সে বিভিন্ন স্বাদ ও গন্ধ নেয় । এই জিহ্বাই সাপের প্রধান ইন্দ্রিয় । কারণ, সাপের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ততটা প্রখর নয়। এদের চোখে পাতা থাকে না। সাপের বহিঃকান থাকে না । তবে এরা অনেক অবশব্দ বুঝতে পারে । কিছু কিছু সাপ, যেমন পিট ভাইপার এবং বোয়া আবার তাপসংবেদী। এদের মাথায় এক ধরনের কোষ থাকে, যার সাহায্যে তারা উষ্ণ রক্তের প্রাণীর উপস্থিতি বুঝতে পারে । এদের এই ইন্দ্রিয়টি এতটাই প্রখর যে গহিন অন্ধকারেও এরা শিকারকে ঠিকমতো আঘাত করতে পারে ।
সাপের আবাসস্থল এবং বংশ বৃদ্ধি
সাপ বেশির ভাগ সময় একাকী ঘুরে বেড়ায় । তবে শীতকালে সাপ শীতনিদ্রায় চলে যায় । এ সময়টায় এরা প্রাকৃতিকভাবে বা অন্য কোনো প্রাণীর (যেমন, ইঁদুর) তৈরি করা গর্তে আশ্রয় নেয় । যেমন, কানাডার গার্টার সাপ গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও শীতের সময় পাহাড়ের গুহার ভেতর একত্র হয় । সব সাপ ডিম পাড়ে না । ডিম পাড়া এবং সেটাকে তা দেওয়ার ঝামেলা এড়ানোর জন্য শীতপ্রধান অঞ্চলে সাপ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে । এ ধরনের সাপকে ভিভিপেরাস সাপ বলা হয় । সাগরের সাপের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায় ।
অ্যানাকোন্ডা
সাপের সংখ্যা কমে যাওয়ার বড় কারণ নগরায়ণ । জনবসতি বাড়ার কারণে প্রচুর সাপ মারা পড়ছে এবং সাপের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে । অনেক ক্ষেত্রে মানুষ যেসব জায়গায় থাকা শুরু করেছে, সেখান থেকে সাপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । অজগর, বোয়া, কোবরা ইত্যাদি সাপের চামড়ার খুব চাহিদা আছে । এ ছাড়া সাপের বিষ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । এসব কারণেও অনেক সাপ মারা হয় ।
সাপুড়ের বাঁশির শব্দে সাপ নাচে না। বরং বাঁশির নড়াচড়ার দিকে লক্ষ রেখে সাপ তার মাথা দোলাতে থাকে
সাপের খেলা বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয় ।
সাপের চোখ
মজার বিষয় হলো, সাপ একবারেই রং চিনতে পারে না। এরা শুধু আলো ও অন্ধকারের পার্থক্য বুঝতে পারে।
সংগ্রহ ও সম্পাদনায় : মনজুরুল আলম
- উৎপত্তি
- স্বভাব ও খাদ্যগ্রহণ
- শারীরিক গঠন
- বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি
- সাপের জিহবা কেমন দেখায়
- জিহবা কেন নাড়ায়
- সাপের আবাসস্থল এবং বংশ বৃদ্ধি
- সাপের চোখ
এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url