শিশুর দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ এবং অলস চোখ

Amblyopia শিশুর দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ এবং অলস চোখঃ 

যদি প্রশ্ন করি আপনার শিশু কি স্পষ্ট দেখতে পায়? তাহলে বেশিরভাগ বাবা-মা উত্তর দেবেন হ্যাঁ। কারণ বাচ্চা তো কখনই চোখ সম্বন্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। এমনকি স্কুলের শিক্ষকও কখনও কিছু বলেননি। কিন্তু এমনও তো হতে পারে আপনার শিশু তার এক চোখ দিয়ে দেখে। অন্য চোখটা সে কখনই ব্যবহার করে না। কারণ অন্য চোখে সে দেখে না। 

দুচোখ মিলিয়ে সে স্বাভাবিক দেখে বলেই চোখ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। চোখের এই অবস্থাকে ডাক্তারী ভাষায় এমব্লায়োপিয়া বা অলস চোখ বলে।

আমরা কিভাবে দেখি?আমাদের চোখ অনেকটা অটো জুম ক্যামেরার মতো কাজ করে। চোখের সামনের দিকে থাকে স্বচ্ছ কর্নিয়া (যাকে আমরা চোখের মণি বলি) ও লেন্স। আর পেছনের দিকে থাকে রেটিনা। রেটিনা হলো নার্ভ বা স্নায়ু দিয়ে তৈরি আবরণ। প্রায় ১ মিলিয়ন 'কোন' ও ৪ মিলিয়ন 'রড' নামক সূক্ষ্ম স্নায়ুতন্ত্রী দ্বারা এই আবরণ তৈরি। কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনাতে পড়লে তা স্নায়ুর মাধ্যমে অপটিক নার্ভ দিয়ে মস্তিষ্কে পৌছায়। মস্তি ষ্ক এই প্রতিবিম্ব বিশ্লেষণ করে আমাদের দৃশ্যমান বস্তুটি কি তা নিরূপণ করে। আর তখনই আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। 

সুতরাং সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, চোখের পেছনে রেটিনাতে সঠিক প্রতিবিম্ব পড়া সেই প্রতিবিম্ব অপটিক নার্ভ দিয়ে ব্রেনে পৌছানো এবং মস্তিষ্কের সেই প্রতিবিম্ব বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকা এই তিনটি জিনিসের যে কোনো একটির ক্ষেত্রে অসুবিধা থাকলে আমরা বস্তুটি দেখতে পাব না ।

দৃষ্টি কি?আমাদের দেখার ক্ষমতাকে সহজ ভাষায় আমরা দৃষ্টিশক্তি বলতে পারি। অনেক হিসাব নিকাশ করে বিজ্ঞানীরা দৃষ্টিশক্তি পরিমাপের উপায় বের করেছেন। 'স্নেলেন চার্ট', নামক একটি চার্টে বিভিন্ন মাপের কিছু অক্ষর সাজিয়ে রাখা হয়। তারপর নির্দিষ্ট ৬ মিটার দূরত্ব থেকে সেই অক্ষরগুলো পড়তে বলা হয়। যদি আমরা নির্দিষ্ট লাইন পর্যন্ত পড়তে পারি তাহলে দৃষ্টিশক্তিকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। চিকিৎসকগণ এই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তিকে ৬/৬ এভাবে লিখে থাকেন। 

কেউ যদি নির্দিষ্ট লাইনের এক লাইন কম পড়তে পারেন তাহলে তার দৃষ্টিশক্তি হবে ৬/৯, এভাবে দুই লাইন কম পড়তে পারলে দৃষ্টি শক্তি হবে ৬/১২, তিন লাইন কম পড়লে ৬/১৮, আবার কেউ যদি শুধু উপরের বড় অক্ষরটি দেখতে পান তবে তার দৃষ্টিশক্তি ৬/৬০ ধরা হয়। সুতরাং ৬/৬ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী লোকের দৃষ্টিশক্তি যেমন স্বাভাবিক ধরা হয় ঠিক তেমনি ৬/৬০ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী লোকের দৃষ্টিশক্তি মনে করতে হবে খুবই ক্ষীণ। 

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে দেখার এই ক্ষমতা বা দৃষ্টিশক্তি কি জন্ম থেকেই গড়ে ওঠে? খুব পুষ্টিকর খাদ্য খেলেই কি দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হবে? এ ব্যাপারে জানতে হলে দৃষ্টি শক্তির ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে জানা দরকার। জন্মের পরপরই শিশুর চোখ আকারে খুব ছোট থাকে। সে তুলনায় তার চোখের লেন্স থাকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। তার ফলে কোন বস্তুরই স্পষ্ট প্রতিবিম্ব চোখের পেছনে রেটিনার উপর পড়ে না। 

তাই জন্মের পরপরই শিশু কোনো কিছুই স্পষ্ট দেখতে পায় না। ধীরে ধীরে শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তার চোখও বড় হয় এবং এক পর্যায়ে সে স্পষ্ট দেখতে পায়। যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি পরিমাপ করতাম তাহলে দেখতে পেতাম যে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং তা ৫ বছর বয়সে পরিপূর্ণতা লাভ করছে ।

জন্মের পরঃ        শিশু শুধুমাত্র আলো দেখতে পায় ।
৩ মাস বয়সেঃ     শিশু আলোর বিন্দুকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে।
8 বছর বয়সেঃ     শিশুর দৃষ্টিশক্তি থাকে ৬/১২
8 বছর বয়সেঃ     শিশুর দৃষ্টিশক্তি থাকে ৬/৯
৫ বছর বয়সেঃ    বছর বয়সেঃ শিশু স্বাভাবিক বা ৬/৬ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হয়

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ৫ বছর বয়সে শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির সমপরিমাণ হওয়া উচিত। এই দৃষ্টিশক্তি শিশুর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বিকশিত হতে থাকে। অর্থাৎ ১২ বছর বয়সে শিশুর যে দৃষ্টিশক্তি থাকবে বাকি জীবনের জন্য সেটাই হবে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো: শিশুর দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশজনিত ঘাটতি শিশুর বয়স ১২ বছর অতিক্রান্ত হলে চশমা বা অন্য কোনো উপায়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে চশমা কি এবং কেন ব্যবহার করি? নিজে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঠিকমত ঘটলেও অনেক সময় আমরা দৃশ্যমান বস্তু ঠিকমত দেখতে পাই না। কারণ হলো চোখের আকৃতি ও গঠনগত ত্রুটি। চোখের সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত ব্যাস “ধারণত থাকে ২৩-২৪ মি.মি। চোখের আকৃতি এর চেয়ে বড় হলে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনাতে না পড়ে রেটিনার সামনে পড়বে। ফলে ঐ বস্তু আমরা পরিষ্কার দেখবো না। এ অবস্থাকে আমরা বলি মায়োপিয়া। এক্ষেত্রে একটা মাইনাস পাওয়ারের লেন্স দিয়ে রেটিনার ওপর প্রতিবিম্ব ফেলা হয়। 

অনুরূপভাবে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার পেছনে পড়তে পারে। এ অবস্থাকে আমরা হাইপারমেট্রোপিয়া বলি। প্লাস পাওয়ারের লেন্স ব্যবহার করে ত্রুটি দূর করা হয়। এ্যাসিটিগমাটিজম নামক আর এক ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে সিলিড্রিক্যাল পাওয়ার ব্যবহার করে ত্রুটি দূর করা হয়। ৪০ বছর বয়সের দিকে আমাদের বই বা খবরের কাগজ পড়তে অসুবিধা হয়। চোখের সিলিয়ারি মাংশপেশীর সংকোচন ক্ষমতা হ্রাস পাবার ফলে এ রকম ঘটে। এক্ষেত্রেও আমরা প্লাস পাওয়ারে চশমা ব্যবহার করে ত্রুটি দূর করি। 

এই অবস্থাকে বলে প্রেসবায়োপিয়া। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে চোখের আকৃতি ছোট বড় থাকার কারণে যদি বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় না পড়ে চোখের সামনে বা পেছনে পড়ে কেবলমাত্র তখনই চশমা দিয়ে প্রতিবিম্ব ঠিকমত রেটিনায় ফেলা হয়। ফলশ্রুতিতে আমরা বস্তুকে ঠিকমত দেখতে পাই। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ যদি ঠিকমত না ঘটে এবং রোগীর বয়স যদি ১২ বছর অতিক্রম করে তবে চশমা দিয়েও দৃষ্টির উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না। দৃষ্টিশক্তির আরও দুটো দিক আছে প্রথমতঃ দুই চোখে একত্রে দেখার ক্ষমতা। দ্বিতীয়তঃ বস্তুর গভীরতা নিরূপণ করার ক্ষমতা। দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঘটার সাথে সাথে এ দুটো ক্ষমতারও ক্রমবিকাশ ঘটে। এই পরিপূর্ণ ক্রমবিকাশ একটা জটিল স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই ক্রমবিকাশ শিশুর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে। শিশুর বয়স ১২ বছর পূর্ণ হলে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশও শেষ হয়। 

অর্থাৎ স্নায়ুবিক যোগাযোগ স্থাপন শেষ হয়। এই স্নায়ুবিক ক্রমবিকাশের পূর্বশর্ত হলো চোখের রেটিনার কেন্দ্রবিন্দু ম্যাকুলাতে বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব পড়তে হবে। চোখের লেন্সের অস্বচ্ছতাই হোক বা চশমার কারণেই হোক যদি ম্যাকুলাতে সঠিক স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ে তাহলে এই স্নায়ুবিক যোগাযোগ ঘটবে না, ফলে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ব্যাহত হবে এবং শিশু বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পাবে না। 

দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশের পরীক্ষামূলক প্রমাণ বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিউবেল ও হুইসেল বিড়ালের ছোট বাচ্চার উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেন। তাঁরা জন্মের পরপরই বিড়ালের বাচ্চার একটি চোখের পাতা সেলাই করে বন্ধ করে দেন, যাতে চোখের ভিতরে আলো ঢুকতে না পারে। অন্য চোখটি খোলা রাখেন যাতে চোখের পেছনে রেটিনাতে সঠিক প্রতিবিদ পড়তে পারে। নির্দিষ্ট সময় পর, চোখ খুলে দিলেও দেখা যায় বাচ্চাটি ঐ চোখে দেখতে পাচ্ছে না এবং মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা যায় ঐ চোখের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগগুলো ঠিকমত বিকশিত হয়নি। বানরের বাচ্চার উপরে পরীক্ষা চালিয়েও একই ফল পাওয়া গেছে। মানুষের ক্ষেত্রেও এটাই সত্যি। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি শিশুর চোখের পেছনে রেটিনাতে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ে তাহলে তার দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। 

এই ক্ষতিগ্রস্থ ক্রমবিকাশকে আমরা এমরায়োপিয়া বা অলস চোখ বলি। এখানে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন, শিশুর বয়স ১২ বছরের আগে যদি এমব্রায়োপিয়া বা দৃষ্টিশক্তির ক্ষতিগ্রস্থ ক্রমবিকাশ ধরা পড়ে তবে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু যদি ১২ বছর অতিক্রম করে যায় তখন চিকিৎসকের আর কিছুই করার থাকে না। নিচে এমব্রায়োপিয়া বা অলস চোখ সম্বন্ধে বিস্তারিত বলা হলো। এমব্লায়োপিয়া বা অলস চোখ শিশুর চোখের পেছনে রেটিনাতে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ার ফলে যদি দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয়, সেই অবস্থাকে আমরা এমব্লায়োপিয়া বা অলস চোখ বলে থাকি। এ অবস্থায় চোখের গঠন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু চশমা দিয়েও দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো যায় না। ফলশ্রুতিতে শিশু দেখতে পায় না। 

বিভিন্ন কারণে এমব্লায়োপিয়া হতে পারে। তার মধ্যে চশমার প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু সময়মত দেয়া হয়নি এটিই প্রধান। এছাড়া ট্যারা বা বাঁকা চোখ, জন্মগত ছানি ইত্যাদি কারণেও এমব্লায়োপিয়া হতে পারে। ব্যাপারটা এভাবে বোঝানো যায়— ধরুন একটি বাচ্চার এক চোখ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কিন্তু অন্য চোখে চশমার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে যে চোখে চশমার প্রয়োজন সেই চোখের পেছনে রেটিনাতে বস্তুর প্রতিবিম্ব ঠিকমত পড়বে না। ফলশ্রুতিতে এই চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঠিকমত ঘটবে না। এ পরিস্থিতিতে বাচ্চা সাধারণত কোন অভিযোগ করে না। কারণ তার দুই চোখ খোলা রেখে দেখতে বা পড়তে কোনই অসুবিধা হয় না। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সে এক চোখে আংশিক অন্ধ হয়ে থাকছে। এছাড়াও দুচোখে একত্রে দেখা এবং কোনো বস্তুর গভীরতা নিরূপণ করার ক্ষমতাও ঐ শিশুর ঠিকমত বিকাশ লাভ করবে না। 

যেহেতু শিশু কোনো অভিযোগ করে না সেহেতু সন্তানের বাবা-মাও ব্যাপারটা সম্বন্ধে অবগত থাকেন না। এভাবে শিশুর বয়স ১২ বছর অতিক্রান্ত হবার পর যদি এ অবস্থা ধরাও পড়ে তখন ডাক্তারের পক্ষে চশমা বা অন্য কোনো উপায়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় আমরা বলি শিশুটির একটি চোখ অলস বা এমরায়োপিক। এ অবস্থা দুচোখেও হতে পারে। তবে আসল কথা হলো ১২ বছর বয়সের পূর্বে এ রোগ ধরা পড়লে তার চিকিৎসা সম্ভব। এমরায়োপিয়া রোগ নির্ণয় অনেক ক্ষেত্রে শিশুর চোখ ট্যারা বা ছানি হলে যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় তখন ডাক্তার পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন শিশুর দৃষ্টিশক্তি কতটুকু। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমব্রায়োপিয়া ধরা পড়ে শিশুর চোখের স্বাভাবিক পরীক্ষার সময়। একটা উদাহরণ দিলে কথাটা পরিষ্কার হবে। কিছুদিন আগে আমার কাছে অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত একজন বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি তার দুই মেয়েকে নিয়ে আসেন। 

বড় মেয়েটির চোখ পরীক্ষা করে বড় ধরনের কোন অস্বাভাবিকতা পাইনি। ছোট মেয়েটি সঙ্গে এসেছে। ওর চোখ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আমি বললাম ওর দৃষ্টিশক্তিও পরীক্ষা করে দেখি। দৃষ্টিশক্তি দেখতে গিয়ে আমি এবং ওর বাবা-মা সবাই খুব অবাক হই। কারণ ওর এক চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক (৬/৬)। কিন্তু অন্য চোখে সে প্রায় দেখতেই পায় না। (৬/৩৬)। 

অর্থাৎ খারাপ চোখে সে চার্টের উপরে মাত্র দুটো লাইন পড়তে পারে যেখানে ৭টি লাইন পড়তে পারা উচিত ছিল। দেখা গেল তার ঐ চোখে চশমার প্রয়োজন আছে এবং চশমার পাওয়ার, ৪। ওর ঐ চোখটা অলস বা এমব্লায়োপিক এবং সে কারণে সে দেখতে পাচ্ছে না। পরে চশমা দিয়ে ও অন্যান্য চিকিৎসা করে তার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা হয়। এভাবেই ধরা পড়ে অলস চোখের অস্তিত্ব। শিশুর বয়স সাড়ে ৪ বছর হবার পরপরই প্রতিটি শিশুর চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা উচিত। 

যদি কম বয়সে দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি ধরা পড়ে তবে তার নিরাময় সম্ভব। সবচেয়ে ভাল হয় যদি স্কুলে প্রথম ভর্তি হবার সময় শিশুর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা যায় । মনে রাখতে হবে স্নায়ুর সংযোগ, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং দৃষ্টিশক্তির পূর্ণতা প্রাপ্তি সবকিছুই ঘটে শিশুর ১২ বছর বয়সের মধ্যে। এর মধ্যে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটে ৪-৫ বছর বয়সে। এই সময়কে দৃষ্টিশক্তির ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড বলে। শিশুর ১২ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ সম্পন্ন হবার পর চোখে সঠিক অথবা ঘাটতিপূর্ণ যে দৃষ্টিশক্তিই থাকুক না কেন পরবর্তী জীবনের জন্য সেটাই হবে স্থায়ী।

(১) চশমা

অলস চোখ নির্ণয়ের সাথে সাথে যদি চশমার প্রয়োজন হয় তবে চিকিৎসক রোগীকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিবেন। এই চশমা রোগীকে সারাক্ষণই পরতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো অবহেলা চলবে না।

(২) অঙ্কুশন বা প্যাচিং

এই পদ্ধতিতে ভাল চোখটিকে একটি তুলার চাকতি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় যাতে করে শিশু বাধ্য হয় অলস চোখ দিয়ে দেখতে, এই সময় শিশুকে রং করা, ছবি আঁকা বা টিভিতে কার্টুন ছবি দেখতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। চক্ষু চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক এই চিকিৎসা করা উচিত। কখনও দিনে এক বা দুই ঘণ্টা আবার কখনও সারাদিন প্যাচিং-এর নির্দেশ দেয়া হয়। মনে রাখতে হবে যে, শিশুর চিকিৎসা ডাক্তার একা কখনই করতে পারবে না। শিশুর সব ধরনের চিকিৎসার জন্যই পিতা-মাতার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। 

(৩) ম্যাকুলার স্টিমুলেশন

এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন যান্ত্রিক উপায়ে যেমন সিনাপটোফোরের সাহায্যে বা CAM ভিজিউয়্যাল স্টিমুলেটরের সাহায্যে চোখের ম্যাকুলাকে উত্তেজিত করা হয়। ম্যাকুলা হচ্ছে রেটিনার কেন্দ্রবিন্দু। বাইরের সবকিছুর প্রতিবিম্ব ম্যাকুলাতে পড়ে বলেই আমরা তা দেখতে পাই। 

অলস চোখে যদিও ম্যাকুলাতে প্রতিবিম্ব পড়ে কিন্তু নার্ভ ও তার পরের সংযোগগুলো ঠিকমত কাজ করে না বলে শিশু দেখতে পায় না। ম্যাকুলাকে স্টিমুলেট বা উত্তেজিত করতে পারলে নার্ভগুলো নিজের সংযোগ খুলে নেয়। এই চিকিৎসার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যেহেতু দৃষ্টিশক্তি খুব দ্রুত উন্নতি লাভ করে। এই কারণে বর্তমানে এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

(৪) অপটিক্যাল বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা

যেসব শিশু কিছুতেই প্যাচিং করতে চায় না তাদের চশমা দিয়ে বা ওষুধ দিয়ে ভাল চোখের দেখার ক্ষমতাকে সাময়িক ভাবে যথেষ্ট কমিয়ে দেয়া হয়। মনে রাখতে হবে শিশুর ভালর জন্যই এটা করা হচ্ছে। ভয় পাবার কিছুই নেই। ডাক্তারের সাথে পিতা-মাতা ঠিকমত সহযোগিতা করলে চিকিৎসা অনেক সহজ হবে এবং বাচ্চা চোখে দেখতে পাবে।

এমব্রায়োপিয়া বা অলস চোখ যত কঠিন রোগই হোক না কেন সময়মত সঠিক চিকিৎসা প্রদান করলে তার নিরাময় সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রযোজন পিতা-মাতার সচেতনতা। আমরা পিতা-মাতারা যদি শিশুর চোখের ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হই এবং সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি তবে শত শত শিশু এমরায়োপিয়াসহ অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে সুস্থ চোখের অধিকারী হবে তাতে কোনো সন্দেহ
নেই। আসুন আমরা সকলে মিলে শিশুর চোখ বাঁচাতে এগিয়ে আসি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসা বিডি ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭