এলার্জিজনিত সর্দি হাঁচি
এলার্জি জনিত সর্দি হাঁচিনাকের এলার্জি অনেকের কাছেই একটি পরিচিত সমস্যা। ছোট-বড় সকলে এই সমস্যায় ভুগতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় শতকরা 10 ভাগ মানুষ জীবনের কোন কোন সময় নাকের এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নাকের এলার্জির এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে এলার্জিক রাইনাইটিস। এলার্জিক রাইনাইটিস কথার অর্থ হচ্ছে এলার্জিজনিত নাকের প্রদাহ।
নাকের এলার্জি কেন হয় কিভাবে হয় মূলত শাঁসের সাথে নাসারন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া এলার্জি উদ্রেককারী বস্তুকে এলার্জির প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। তবে এলার্জি উদ্রেককারী খাবার গ্রহণের কারণে নাকের এলার্জি হওয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। শ্বাসের সাথে নাকের মধ্যে ঢুকে পড়া এলার্জি উদ্রেককারী এই বস্তুকে বলা হয় অ্যালার্জিন।
এই অ্যালার্জিন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ও এর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নাকে এলার্জিজনিত উপসর্গের সৃষ্টি করে থাকে। ফলে নাকে চুলকানি বা অস্বস্তি, নাকের ঝিল্লি ফুলে যাওয়া ও লালাভ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি দেখা যায়।। অনেক সময় একটু দেরিতে এ কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।
তবে নাকের এই অ্যালার্জি কার কিসে হচ্ছে বা কি কারনে হচ্ছে বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী রোগীরা তার সহজেই বুঝে নিতে পারেন। যেমন শীতের সময় ঠান্ডা লাগলেই তার এই এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টা একটু সচেতনভাবে লক্ষ্য করলেই বের করা সম্ভব।
সব ঋতুতেই বিভিন্ন ফুলের পরাগরেনু উড়ে বেড়ায় এবং ফাঙ্গাসের স্পোর বা বীজ বেশি বেশি সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। এইসব এলার্জিতে আক্রান্ত রোগের নাক চোখ চুলকায়, হাচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং শেষে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। এছাড়া ঘরবাড়ির ধুলায় অবস্থিত মাইেটর মল থেকে এই ধরনের নাকের এলার্জি প্রায় সারা বছর ধরেই হতে পারে। তবে মাইেটর সাথে ঘরবাড়ি অন্যান্য ধুলা, পাখির পালক, পশুর লোম থেকেও এ ধরনের এলার্জি হয়ে থাকে। এই ধরনের এলার্জি আক্রান্ত রোগীদের মাথা রন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে বড় হয়ে যায়। অনেকে এটিকে নাকের পলিপ বলে ভুল করে থাকেন।
নাক পর্যবেক্ষণযদিও উপসর্গ থেকেই নাকের অ্যালার্জি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা নেওয়া যায়। তারপরও নাক পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। এক্ষেত্রে নাক পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে।
তীব্র অবস্থায়- নাকের ভেতরে ভেজাভাব, খোলা ও ফ্যাকাসে ঝিল্লি, নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে বড় হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়।
দীর্ঘদিনের এলার্জিজনিত সমস্যায়- নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে হালকা গোলাপি রঙের ফুলে বড় হওয়া মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) দেখা যায়, যার পিছনের দিকটা ফুলে থাকে।
ল্যাব টেস্টএক্ষেত্রে দুই একটি ল্যাবরেটরি টেস্ট করা যায়। যেমন ইমিউনোলজিক্যাল টেস্ট (এন্টিজেনিক চ্যালেঞ্জ ইয়ােসিনোফিল কাউন্ট এবং আইজি-ই মাত্রা)।
কেমন হবে চিকিৎসাকিছু নিয়ম মেনে চলা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং কিছু ওষুধ পত্রের মাধ্যমে এলার্জিজনিত নাকের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। নাকের এই এলার্জি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হয় না। কারণ এর সঙ্গে এলার্জেন এর উপস্থিতির বিষয়টি জড়িত। কখনোই এই পরিবেশ থেকে যেমন চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব নয় তেমনি এলার্জেন কে সব সময় এড়িয়ে চলাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে সবকিছু মিলিয়ে ভালো থাকা কোন কঠিন বিষয় নয়।
এলার্জির উদ্রেককারী বস্তু এড়িয়ে চলা উদ্রেককারী কারী বস্তু বা অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, কোন জিনিসে এলার্জির উদ্রেক হচ্ছে সেটি বের করা। ঘরবাড়ির ধুলার কারণে এলার্জি দেখা দিলে ঘর পরিষ্কার ধুলা মুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনে ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে ঘর ধুলা মুক্ত রাখতে হবে। দরকার হলে ধুলার উৎস কার্পেট সরিয়ে ফেলতে হবে, বিছানার চাদর নিয়মিত ধুতে হবে, ঘরটিকে খোলামেলা রাখতে হবে যাতে ঘরের আদ্রতা কম থাকে।
ওষুধপত্র দেওয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ীওষুধপত্র দেওয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী এন্টিহিস্টামিন জাতীয় বিভিন্ন ওষুধের যেকোনটি ওষুধের উপযুক্ততা বিচার করে ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া রয়েছে সরাসরি এলার্জি রোধক কিছু ওষুধ। এগুলো কারো বেলায় বেশ ভালো কাজ করে। এলার্জির কারণে নাক বন্ধ হলে নাক বন্ধ প্রতিরোধক ওষুধেও সাথে ব্যবহার করতে হয়।
মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড এবং স্টোরয়েড ইনজেকশন গ্রহণের ব্যাপারে এখন আর তেমন উৎসাহিত করা হয় না। একইভাবে এক্ষেত্রে vaccine খুব একটা কার্যকরী নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নাকের এলার্জির জন্য কার্যকর কোন অপারেশন নেই তবে নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড ইনফিরিয়র টারবিনেটর ফুলে বড় হয়ে নাক বন্ধ হয়ে গেলে সেই মাংসপিণ্ডগুলো ডায়াথারমি করে কিংবা সেটে ছোট করে দেওয়ার দরকার হয়। একজন নাক গলা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে নাকের এলার্জিজনিত সমস্যার চিকিৎসা ধৈর্য সহকারে গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসায় শুধু ওষুধের উপর নির্ভর করলেই চলবে না এলার্জেন এড়িয়ে চলার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে।
This comment has been removed by the author.